bdstall.com

ডায়রিয়া রোগের কারণ ও প্রতিকার

 

বর্তমান সময়ে ডায়রিয়া একটি অতি পরিচিত রোগের নাম। ছোট থেকে বড় এমনকি মাঝারী বয়সের মানুষেরাও এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ডায়রিয়া রোগটি সিজনাল রোগ হিসেবে ধরা যায়। এটি মূলত গ্রীষ্মকালের দিকে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। গ্রীষ্মের অসহনীয় তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে ডায়রিয়া, আমাশয় ও কলেরা রোগের প্রার্দুভাব বেড়েই চলেছে। ডাইরিয়া বা কলেরা রোগের মূল উৎপত্তি হিসেবে দুষিত পানি পান করা এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াকে দায়ী করা হয়। আজকে আমরা ডায়রিয়া, কলেরা বা আমাশয় রোগের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। 

 

ডায়রিয়া কি?

 

ডায়রিয়া বলতে সাধারণত পানির মতো ঘন ঘন পাতলা পায়খানা করাকে বুঝায়। সাড়াদিনে যদি ৩ বার বা তার অধিক পরিমানে পাতলা পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া হিসেবে গণ্য করা হয়। ডায়রিয়া রোগটি ৫বছরের নিচে শিশুদের বেশি হওয়ার প্রবনতা দেখা যায় এবং এতে করে মৃত্যুর ঝুকিও বেশি থাকে।   

 

ডায়রিয়া রোগের লক্ষণ

 

ডায়রিয়া রোগ শুরুর আগে এবং পরে অনেক ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। বয়স ভেদে এর উপসর্গ ভিন্ন ধরনের হতে পারে। এর মধ্যে যেসকল লক্ষণ সচারাচর দেখা যায় তা হ’ল    

** পায়খানার চাপ হঠাৎ করে চেপে বসা।

 

** পায়খানার চাপ আসলে দ্রুত টয়লেটে যাওয়ার মতো সময় অপেক্ষা করতে না পারা।

 

** নিজের প্রতি চাপের নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারা।

 

** পেটের নিচের দিকে কাঁমড় বা ব্যাথা অনুভব করা।

 

** হালকা বা বেশি বমি-বমি ভাব থাকা।

 

** শরীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যাবে।

 

** পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

** জ্বর, মাথা ব্যাথা, মাথা ঘোরা হতে পারে।

 

** ঘন ঘন পানির পিপাসা পাওয়া। (শিশুদের জন্য)

 

** শরীরের ত্বকের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া এবং চোখ-মুখ শুকনো দেখাবে। (শিশুদের জন্য)

 

** অস্বাভাবিক ভাবে প্রসাব কমে যাওয়া। (শিশুদের জন্য)

 

 

ডায়রিয়া রোগের কারণ

 

ডায়রিয়া বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে তা মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভাইরাস, জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া। এছাড়াও যে সকল কারণে হতে ডায়রিয়া হতে পারে তা হ’ল”-  

 

** দূষিত পানিঃ দূষিত পানির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র জিবাণু থাকে যা খালি চোখে দেখা যায় না। এই ধরনের দূষিত পানি পান করলে ডায়রিয়া রোগের সৃষ্টি হয়।

 

** অস্বাস্থ্যকর খবারঃ অস্বাস্থ্যকর খাবার বলতে বাশি-পচা খাবার বা দূষিত খাবার কে বুঝায়। এই ধরনের খাবারের মধ্যে নানান ধরনের ব্যাকটেরিয়ার তৈরি হয় যা মানুষের পাকস্থলিতে গেলে পরবর্তিতে ডায়রিয়ার মতো রোগের সৃষ্টি করে।

 

 ** অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেঃ স্যাতস্যাতে বা অস্বাস্থকর পরিবেশে পরিবেশে বসবাস করলে ডায়রিয়া হওয়ার প্রবণতা থাকে।  

 

** ঔষধঃ বর্তমান সময়ে এমন কিছু ঔষধ যা পরিমানের কম বা বেশি হলে ডায়রিয়ার সৃষ্টি করে এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক এবং ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত এন্টাসিড ট্যাবলেট।  

 

ডায়রিয়া হলে করণীয় কি?  

 

১। ডায়রিয়া হলে শরীরে প্রচুর পরিমানে পানির শূণ্যতা এবং লবণের ঘাটতি দেখা দেয়। এর জন্য যথা সম্ভব চেষ্টা করতে হবে এর ঘাটতি পূরণ করা। শরীরের ঘাটতি পূরণের জন্য রোগিকে ঘন ঘন তরল খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।

 

২। ডায়রিয়া হলে রোগী স্বভাবিক ভাবে অনেক দূর্বল হয়ে পরে। শরীরের ঘাটতি দূর করার জন্য পূষ্টিকর খাবার খাওয়ানো উচিৎ।      

 

৩। ছোট শিশুদের ডায়রিয়া হলে খুবই গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করা উচিৎ। মোটামুটি স্বভাবিক পর্যায়ে থাকলে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। যদি শিশুর শরীরে জ্বর এবং ডায়রিয়া এক দিনের মধ্যে কম অনুভুত না হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

 

৪। একজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক মানুষের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা শিশুদের তুলনায় কয়েকগুন বেশি থাকে। উপরোক্ত নিয়ম মেনে চলার পরেও ২৪ ঘনাট্র মধ্যে ৬ বার তার অধিক পরিমানে পায়খানা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

 

ডায়রিয়া রোগ-প্রতিরোধে করণীয় কি?

 

১। পর্যাপ্ত পরিমানে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পান করা। পানি বিশুদ্ধ করতে ভালো ভাবে পানি ফুটিয়ে পান করা উচিৎ। আর বাংলাদেশে পানির ফিল্টারের দাম এখন অনেক কম তাই এই মেশিন ব্যবহার করে সবসময় বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়। আর এই ধরনের মেশিনের মধ্যে RO ফিল্টার হল সবচেয়ে ভাল। তাই যাদের বাসায় বাচ্চা আছে তারা এটি দিয়ে ৯৯% পর্যন্ত পিউর করতে পারবেন। এটি ফুটানো থেকে অধিক কার্যকরী।

 

২। শরীরের লবণের ঘাটতি পূরনের জন্য প্রচুর পরিমানে লবন ও পানি কিংবা তরল খবার স্যালাইন খেতে হবে।

 

৩। গরমের মধ্যে বাশি-পচা এবং তেল জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকুন এবং খাবারের আগে অবশ্যই সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে খাবার খেতে হবে। 

 

৪। অতিরিক্ত গরমের মধ্যে আবদ্ধ পরিবেশে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি খোলামেলা পরিবেশে গরমের মাত্রা বেশি থাকে তাহলে নির্দিষ্ট সময় পর পর শরীরকে ঠান্ডা করে নিতে হবে।

 

৫। সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।

 

৬। জন্মের পর থেকে প্রত্যেক শিশুকে ৬ মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ পান করানো উচিৎ।

 

৭। নিজে স্বাস্থ্য সচেতন হই অপরকেও সচেতন হতে উৎসাহিত করি। যদি সম্ভব হয় তাহলে ডায়রিয়া প্রতিরোধের জন্য রোটা নামক ভ্যাক্সিন গ্রহণ করি।   

 

 

সতর্কতা

 

ডায়রিয়া জনিত অসুখের কারণে শরীর হতে প্রচুর পারিমাণে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায় ফলে রোগী পানি শূন্যতায় ভোগে। সঠিকমাত্রায় পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণ করা না হলে রোগী মারাত্মক কিডনী জনিত অসুখের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। পরবর্তীতে যা জীবনের প্রতিও হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। এই বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে।   

 

এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: March 30, 2022
Reviews (0) Write a Review