bdstall.com

কিভাবে ই-কমার্সের ব্যবসা শুরু করবেন?

বর্তমান বিশ্বের একটি আলোচিত বিষয় হলো ই-কমার্স বিজনেস। ইন্টারনেটের অগ্রগতির সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক কর্মক্ষেত্র। তাই বলা যায় বর্তমান বিশ্বের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ই-কমার্স বিজনেস হয়ে উঠুক সেরা পেশার মধ্যে অন্যতম। কারণ ইন্টারনেটের এই প্রজন্মে আজকাল ই-কমার্স ব্যবসায়ী বেশ চাহিদা রয়েছে।  অনলাইন ভিত্তিক পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।  এমনকি ইন্টারনেটে থেকে সামগ্রী কেনার মানুষের সংখ্যা ও ক্রমশ বেড়েছে।  আপনার যদি অফলাইনে ব্যবসা থাকে তবে আপনার ব্যবসাকে অনলাইন সেবাতেও পরিণত করতে পারেন বিডিস্টল ডট কম এর মাধ্যমে। ব্যবসা প্রচারের জন্য অনলাইন মাধ্যমটি এখন বিশেষ মাধ্যম হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ অনলাইনে অধিকাংশ মানুষ তাদের সময় ব্যয় করে, আপনার প্রচার করা বিজ্ঞাপণটি  অল্প সময়ে  আপনার গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাবে, এছাড়াও ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ই-কমার্স পদ্ধতির অনেক সুবিধা রয়েছে।  কিছু সুবিধা নীচে উল্লেখ করা হয়েছে।


 


 


●    একটা ফিজিক্যাল শপ দিতে হলে, সেই দোকানের ভাড়া, সিকিউরিটি মানি, বিদ্যুৎ বিলসহ নানা খরচ থাকে। কিন্তু ই-কমার্সের জন্য এগুলোর দরকার পড়েনা। ঘরে বসেই অনলাইন স্টল খোলা যায়।
 
●    ই-কমার্স শপে একজন কাস্টমার ২৪ ঘন্টার যেকোন সময়ে পণ্য অর্ডার করতে পারে। যেটা দোকানে এমনিতে সম্ভব নয়।
 
●    ই-কমার্সে কাজ করতে হলে বাইরে যাওয়ার দরকার পড়েনা। নিজের ঘরে বসেই কাজ করতে পারবেন।
 
●       ই-কমার্স দূরবর্তী ক্রেতার সাথে যোগাযোগের সমস্যা দূর করেছে। ব্যবসায়ীরা এখন অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজেই অন্য অঞ্চলের মানুষকে আকর্ষণ করতে পারছে।
 
এখন অনেকের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জন্মেছে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার পূর্বে আমাদের কি কি বিষয় বিবেচনা করতে হবে?

কি করেই বা শুরু করবো ই-কমার্স বিজনেস? 

তাই আপনাদের সুবিধার্থে ই-কমার্স ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন। এ বিষয়ে কিছু বিশেষ দিক উল্লেখ করা হলো এই লিখার মাধ্যমেঃ-

 

ওয়েবসাইট তৈরিঃ
 
ই-কমার্স ব্যবসা এর প্রথম ধাপটাই হচ্ছে ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি।  ই-কমার্স ব্যবসা করবেন আর আপনার ওয়েবসাইট থাকবে না তা হতে পারে না। ওয়েবসাইট হচ্ছে অনলাইনে আপনার পণ্যের শোকেজ। সেখানে আপনার সকল পণ্য ক্যাটাগরি অনুযায়ী সাজানো থাকবে যাতে গ্রাহকরা খুব সহজে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্যটি খুঁজে পেতে পারে এবং ক্রয় করতে পারে।
 
কি ধরনের প্রোডাক্ট বিক্রি করবেন তা নির্ধারণ করুনঃ
 
একজন ব্যক্তির পক্ষে একত্রে অনেকগুলো প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। এমন কিছু প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে হবে যে প্রোডাক্ট এর বর্তমান বাজারে চাহিদা বেশি এবং যা মানসম্মত। বর্তমান বাজারে কোন প্রোডাক্ট গুলো প্রতি মানুষের চাহিদা বেশি অর্থাৎ মানুষ আসলে কি ধরণের প্রোডাক্ট  কিনতে চাইছে সেই প্রোডাক্ট গুলো নিয়ে কাজ করা উচিত। আপনার বিক্রি করা প্রোডাক্টগুলো সহজলভ্য কিনা বিবেচনা করুন। এমন সব প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে হবে যা আপনার পক্ষে সংগ্রহ করা সহজ এবং আপনার বাজেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ্ব থাকে।
 
বাজার বিশ্লেষণ করাঃ
 
ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার আগে অবশ্যই আপনাকে বাজার বিশ্লেষণ করতে হবে। বাজার বিশ্লেষণ না করে ব্যবসা শুরু করলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। ই-কমার্স ব্যবসায় নামার আগে আপনাকে আপনার প্রতিযোগীদের সক্ষমতা যাচাই করতে হবে। আপনার প্রতিযোগী হবে আপনার একই পণ্যের অন্য বিক্রেতারা। তাদের মূলধন, মার্কেট শেয়ার, অবকাঠামো এবং জনবল সক্ষমতার বিপরীতে আপনি টিকতে পারবেন কিনা তা যাচাই করুন।
 
বাজেট নির্ধারণঃ
 
সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে হলে আপনার  চাই একটি সুনির্দিষ্ট বাজেট। কোথায়, কখন, কিভাবে, কত পরিমাণ বাজেট নির্ধারণ করতে হবে তার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। আপনার পুজির সম্পূর্ণ টাকা বাজেটে লাগিয়ে ফেলবেন না, ঠিক যেই পরিমান অর্থ নিয়ে প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর দরকার বলে মনে করছেন, ঠিক সেই পরিমান টাকা প্রথমদিকের  বাজেট হিসেবে রাখুন। যাতে প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর সময় কিংবা দাঁড় করানোর পরেও কোনরুপ সমস্যার সম্মুখীন হলে সেই সাপোর্টিং বাজেট আপনাকে সহায়তা দিতে পারে। প্রতি ক্ষেত্রে কত টাকা ব্যয় হবে তার উপর প্রতিদিন বাজেট তৈরি করুন। এমনকি, আপনি যদি সামান্য কিছু কিনেন তার খরচ সহ বাজেটের মধ্যে রাখুন।
 
ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের নাম নির্ধারণঃ
 
যে কোন ব্যবসা শুরু করার পূর্বে প্রথমে তার নাম নির্ধারণ করতে হয়। ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমে আপনি প্রতিষ্ঠানের একটি ডোমেইন নাম নির্ধারণ করুন কারন নামই আপনার ব্যবসা পরিচয়। কথায় আছে “নেম ইজ ব্র্যান্ড” তাই আপানার ব্যবসায় এর জন্য একটি ভালো নাম নির্বাচন করতে পারলেই খুব সহজেই আপনি  মানুষের কাছে আপনার কোম্পানির একটি ভালো ইমেজ দাঁড় করাতে পারবেন। চেষ্টা করুন ব্যবসার একটি আকর্ষণীয় নাম রাখতে তবে নাম দেখেই মানুষ আপনার ব্যবসায় আকর্ষিত হবে। যদি বিশেষ কোন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে থাকে তবে সেই প্রোডাক্ট এর নামে প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা যায়, আর যদি বেশকিছু প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে থাকে তবে প্রোডাক্টগুলোর সাথে মানানসই সেইরকম ভাবে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিক করতে হবে।
 
প্রোডাক্ট খরচঃ
 
একটি ব্যবসা শুরু প্রথম বিবেচ্য বিষয় হল কত কম খরচে আপনার ব্যবসাটি শুরু করা যায়  অর্থাৎ আপনার খরচ মূল্য কত কমানো যায়। কিভাবে, এবং  কত অল্প সময়ে ভালো প্রোডাক্ট কিভাবে আনা যাবে ও কত কম খরচ পরবে এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক। কারণ আপনার খরচ যত কমবে আপনি সে প্রোডাক্টটি আপনার বিক্রেতার কাছে তত কমে পৌঁছে দিতে পারবেন। আর এই খরচ যত কমাতে পারবেন প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ঠিকে থাকা আপনার পক্ষে তত বেশি সহজ হয়ে যাবে। ক্রেতার কাছে ততবেশি আপনি পৌঁছাতে পারবেন। ভালো প্রডাক্ট কম মূল্যে পেলে আপনার ক্রেতারাও আপনার সাথে সর্বদা নিযুক্ত থাকবে।

 প্রচারই প্রসারঃ
 
ব্যবসায় কাস্টমার আনার প্রথম পদক্ষেপ হলো প্রচার।  প্রথম অবস্থায় যখন আপনি ই-কমার্স বিজনেস শুরু করবেন তখন আপনার কোনো ক্রেতা থাকবে না। এক্ষেত্রে আপনাকে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। যত ভালো অবস্থাই থাকুক প্রতিষ্ঠানের, আপনি ঠিকমত যদি মার্কেটিং করতে না পারেন তবে আপনি আপনার কাস্টমারদের কাছে পৌঁছাতে পারবেন না।  ব্যবসা টিকিয়ে রাখার অন্যতম মাধ্যমই হচ্ছে মার্কেটিং। যত ভাল মার্কেটিং করতে পারবেন আপনার ব্যবসার প্রসার তত বেশি হবে।

 

আর এই মার্কেটিং আপনাকে করতে হবে দুইভাবে। যেমনঃ-


১. অনলাইন মার্কেটিং  


২. অফলাইন মার্কেটিং

ই-কমার্স ব্যবসায় এর জন্য অনলাইন মার্কেটিং এর উপর জোর দিতে হবে বেশি। তাই বলে অফলাইন মার্কেটিংকে বাদ দিবেন তা কিন্তু না। অফলাইন মার্কেটিংও করতে হবে। অনলাইন মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সঠিক ব্যবহার করতে হবে, ফেসবুক, টুইটার সহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেইড বিজ্ঞাপন করতে হবে। পেজ প্রমোট, ইমেইল মার্কেটিং, এসএমএস মার্কেটিং, পোস্টারিং, লিফলেট, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন সবকিছুর নিয়ে চিন্তা করতে হবে। বাজেট যেমন হবে সেইরকম চিন্তা রেখে মার্কেটিং করতে হবে। এতে করে ক্রেতার কাছে সহজে আপনি আপনার প্রোডাক্ট নিয়ে পৌঁছাতে পারবেন ।
 
পর্যাপ্ত স্টক তৈরি করাঃ


যে সকল প্রডাক্ট বিক্রি করবেন তার মিনিমাম একটি স্টক তৈরি করতে হবে। খুব বেশি স্টক তৈরি করার দরকার নেই।
 
মানসম্মত প্রোডাক্ট সরবরাহ করাঃ
 
ক্রেতাদের মানসম্মত প্রোডাক্ট সরবরাহ করা আপনার মানবিক দায়িত্ব। এমনকি প্রোডাক্ট ভালো এবং সুন্দরভাবে সুরক্ষিত উপায়ে পৌঁছে দিতে সক্ষম হতে পারা ব্যবসার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। কত সময় পর্যন্ত প্রোডাক্ট ভালো থাকবে এবং কিভাবে রাখলে ভালো অবস্থায় সংরক্ষিত থাকবে তা নিজেকে সঠিক উপায়ে ঠিক করতে হবে। প্রোডাক্টিকে ভালোভাবে প্যাকিং করতে হবে, যাতে ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে। ক্রেতাকে প্রোডাক্টির যে ছবি দেখানো হবে সেই প্রোডাক্টটি যেন ক্রেতার হাতে পৌঁছায় এই ব্যাপারে নিশ্চিত করতে হবে। ক্রেতার সাথে যেই ধরণের প্রোডাক্ট নিয়ে কথা বলা হয়েছে সেই প্রোডাক্টির অক্ষুন্নভাবে ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিতে পারলেই আপনার ব্যবসা সার্থক।
 
প্রোডাক্ট ডেলিভারি  সিস্টেমঃ
 
ব্যবসার অগ্রগতির জন্য কাস্টমের মন জয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে আপনি আপনার ব্যবসায় রিটার্ন কাস্টমার পাবেন। আর কাস্টমারের মন জয় করার অন্যতম মাধ্যম হল সঠিক প্রোডাক্ট ডেলিভারী। কাস্টমার যেন খুব দ্রুত, অক্ষত, সুন্দর প্যাকেজিং করা প্রোডাক্ট হাতে পায় এ বিষয়টি নিশ্চিত করুন।  এটাতে যদি ব্যর্থ হন, তাহলে রিটার্ন কাস্টমার কখনোই পাবেন না, সেই সাথে নতুন কাস্টমারের সংখ্যাও দিন দিন কমতেই থাকবে। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে তা হল সর্বনিম্ন খরচে কিভাবে সব থেকে ভালো মানের সার্ভিস দেওয়া যায়। এর জন্য আপনি বিভিন্ন ই-কুরিয়ারের সাহায্য নিতে পারেন। এছাড়াও আপনি ট্রাকিং পদ্ধতি চালু করতে পারেন প্রোডাক্ট ডেলিভারির সময় ট্রেকিং পদ্ধতি বেশ উপকারী৷ এতে প্রোডাক্ট এখন কোন এলাকায় আছে তা ক্রেতা বিক্রেতা দুজনেরই জানা থাকবে। প্রোডাক্টটি কোথায় আছে এই ইনফরমেশন যদি ক্রেতার কাছে থাকে তবে ক্রেতারা ভরসা পাবে এবং তাদের আপনার কোম্পানির উপর বিশ্বাসও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া ও আরেকটি সুবিধা হলো প্রোডাক্টটি কোথায় আছে জানা থাকলে  সেই অনুযায়ী বাড়িতে থেকে ক্রেতারা প্রোডাক্টি গ্রহণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে প্রোডাক্টটি মিস হয়ে যাওয়ার বা হারিয়ে যাওয়ার কোন চিন্তা থাকবে না।
 
পেমেন্ট পদ্ধতি নির্ধারণঃ
 
আপনার কাছ থেকে প্রোডাক্ট কেনার পর কাস্টমার কোন মাধ্যমে পেমেন্ট ক্লিয়ার করবে সেটা আগে ঠিক করে নিতে হবে।  ক্যাশ অন ডেলেভারি এবং অনলাইন পেমেন্ট দুইটি মাধ্যমের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ক্রেতাকে সময়ের সাথে সাথে অনলাইনে পেমেন্ট করে কেনাকাটায় আগ্রহী করে তুলতে চেষ্টা করতে হবে। এতে করে কেনাকাটার পদ্ধতি এবং লেনদেন অনেক সহজতর হবে এবং ক্যাশ অন ডেলেভারি প্রসেস এর সঠিক ব্যবস্থা করতে হবে। অনলাইন পেমেন্ট এর ক্ষেত্রে বর্তমানে সুরক্ষিত অনেক অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম আছে।
 

আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে যথাযথ প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।
 
 

 

এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: November 25, 2021
Reviews (0) Write a Review