bdstall.com

খেজুরের দাম

আইটেম ১-২ এর ২

বিশ্বের সর্বত্র সর্বোৎকৃষ্ট ড্রাই ফ্রুট হিসেবে খেজুরের খ্যাতি রয়েছে। কেননা খেজুরে থাকে কোলেস্টেরল, অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন (ই-১, ই-২, ই-৩, ই-৫, ও ভিটামিন-সি), প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, এবং চর্বি। নিয়মিত খেজুর খেলে যেমন বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তেমন বিভিন্ন জটিল রোগ এড়িয়ে চলা যায়।

বাংলাদেশে কয় ধরণের খেজুর পাওয়া যায়?

বর্তমানে বাংলাদেশে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, জর্ডান, মিশর, ও ইরাক থেকে  প্রায় ১০০ রকমের খেজুর আমদানি করা হয়। যার মধ্যে ২০ থেকে ২২ ধরনের খেজুর ঢাকায় পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মানুষের মাঝে জনপ্রিয় ও অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন কিছু খেজুরের জাত নিয়ে আলোচনা করা হলঃ

আজওয়া খেজুরঃ আজওয়া খেজুর মদিনার সর্বোত্তম খেজুর বিধায় দামেও তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। আজওয়া খেজুর দেখতে জামের মত কালো বর্ণের হয়ে থাকে। এবং, আজওয়া খেজুরের পুষ্টিগুণ তুলনামূলক সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও, আজওয়া খেজুর বিশেষ করে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের জন্য বেশি উপকারী।

মরিয়ম খেজুরঃ স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বিবেচনায় মরিয়ম খেজুর অনন্য। বহিঃ বিশ্বে ও বাংলাদেশে মরিয়ম খেজুরের জনপ্রিয়তা ব্যাপক। অন্যান্য খেজুরের তুলনায় মরিয়ম খেজুরে পলিফেনলের পরিমাণ বেশি থাকে। স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বিবেচনায় আজওয়া খেজুরের পরেই মরিয়ম খেজুরের স্থান। বিশেষ করে মদিনার মরিয়ম খেজুরের স্বাদ সবচেয়ে বেশি। মরিয়ম খেজুর মাবরুম খেজুর নামেও পরিচিত। এই খেজুর ১-ইঞ্চির মত লম্বা হয় এবং আঁটিগুলো আকারে ছোট হয়ে থাকে। এবং, খেতে নরম ও খুবি সু-স্বাদু।

আলজেরিয়ান খেজুরঃ আলজেরিয়ান খেজুর কিছুটা লম্বা হয় এবং খেজুরের সাইজের তুলনায় খেজুরের আঁটির সাইজ ছোট থাকে। এই খেজুরের মাংসের পরিমাণ বেশি থাকে এবং তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায়।

মেডজুল খেজুরঃ মিশর থেকে আমদানিকৃত মেডজুল খেজুর খেতে নরম ও খুবি মিষ্টি হয়ে থাকে বিধায় দামও তুলনামূলক বেশী হয়। মেডজুল খেজুর দেখতে লম্বা ও মোটা আকৃতির হয়। অন্যদিকে, খেজুরের রাণী হিসেবে মেডজুল খেজুরের খ্যাতি রয়েছে।

দাব্বাস খেজুরঃ বাংলাদেশের সকল স্তরের মানুষের মাঝে দাব্বাস খেজুর ব্যাপক জনপ্রিয়। কেননা বাংলাদেশের সর্বত্র দাব্বাস খেজুর তুলনামূলক সবচেয়ে কম দামে পাওয়া যায়। তাই, প্রতি বছর দাব্বাস খেজুর সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয়। দাব্বাস খেজুর খেতে খুবি সু-স্বাদু হয়ে থাকে। এবং, এই খেজুর দেখতে অনেকটা বড়ইয়ের মত ও কিছুটা লম্বাটে।

সাফাওয়ি খেজুরঃ সাফাওয়ি খেজুর দেখতে গাঢ় বাদামি রঙের ও কিছুটা লম্বাটে হয়ে থাকে। সাফাওয়ি খেজুরের বিশেষত্ত হল এই খেজুর খেতে অনেকটা মরিয়ম খেজুরের কাছাকাছি স্বাদের হয়ে থাকে। সাফাওয়ি খেজুর মূলত মদিনায় ও  সৌদি আরবে উৎপাদন করা হয়। এই খেজুর খেতে নরম ও মিষ্টি হয়।

আম্বর খেজুরঃ মদিনায় উৎপাদনকৃত খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে বড় খেজুর হিসেবে আম্বর খেজুরের খ্যাতি আছে। আম্বর খেজুরের অনন্য স্বাদ ও নরম গঠনের কারনে বাংলাদেশসহ বহিঃ বিশ্বে এর চাহিদা রয়েছে। এই খেজুর শুধুমাত্র মদীনা মুনাওয়ারা উৎপাদন হয়। তুলনামূলক সবচেয়ে দামি খেজুরের সারিতে আম্বর খেজুর অবস্থান করছে।

নাগাল খেজুরঃ নাগাল খেজুরের স্বাদ অনেকটা দাব্বাস খেজুরের মত। তবে নাগাল খেজুর দেখতে দাব্বাস খেজুরের তুলনায় লম্বাটে ও বড় আকারের হয়। নাগাল খেজুরের দাম তুলনামূলক কম হয়ে থাকে।

খুরমা খেজুরঃ সবচেয়ে শুকনো খেজুর হিসেবে খুরমা খেজুরের খ্যাতি বিশ্বব্যাপি। সৌদি আরবে উৎপাদিত খুরমা খেজুরের রয়েছে ভিন্ন স্বাদ ফলে বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। খুরমা খেজুর দেখতে অনেকটা হলদে বর্ণের ও লম্বাটে হয়ে থাকে। বাংলাদেশে তুলনামূলক কম দামে খুরমা খেজুর পাওয়া যায়।

তিউনিসিয়ান খেজুরঃ তিউনিসিয়ান খেজুর দেখতে আলজেরিয়ান খেজুরের মত তবে তুলনামূলক তুলতুলে নরম ও গাড় রঙের হয়ে থাকে। বাংলাদেশে তিউনিসিয়ান খেজুরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সুক্কারি খেজুরঃ সুক্কারি খেজুর তুলনামূলক অনেক বেশি মিষ্টি হয়ে থাকে। এই খেজুর দেখতে অনেকটা উগ্র স্বর্ণালী রঙের হয়। সমগ্র সৌদি আরবে সুক্কারি খেজুরের ব্যাপক ফলন দেখা যায়। সুক্কারি খেজুরের অন্যতম গুন হল এই খেজুর অনেকদিন রেখে খাওয়া যায়। বাংলাদেশে সুক্কারি খেজুরের দাম তুলনামূলক বেশি।

কুদরি খেজুরঃ কুদরি খেজুর মূলত সৌদি আরব থেকে আমদানি করা হয়। এই খেজুর দেখতে খুবি আকর্ষনীয় ও খেতে খুবি সু-স্বাদু হয়ে থাকে। বাংলাদেশে কুদরি খেজুরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কুদরি খেজুরের দাম তুলনামূলক সহনীয় মাত্রায় হয়ে থাকে।

সুগাই খেজুরঃ সুগাই খেজুরের গোড়া মূলত শুকনো এবং দেহের বাকি অংশ নরম হয়ে থাকে। এবং, রঙ্গের দিক থেকে গোড়ার দিকে সোনালি বর্ণের ও দেহের বাকী অংশ বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে। সুগাই খেজুরের দুই ধরনের স্বাদ ও বৈচিত্রময় গঠনের কারনে বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়।

জাহিদি খেজুরঃ বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দামে জাহিদি খেজুর পাওয়া যায় বিধায় জাহিদি খেজুর নিম্নবিত্ত মানুষের চাহিদার শীর্ষে অবস্থান করছে। তাই, প্রতি বছর ইরাক থেকে প্রচুর পরিমাণ জাহিদি খেজুর আমদানি করা হয়। জাহিদি খেজুর খেতে মিষ্টি ও নরম হয়।

এছাড়াও, অনেক জাতের খেজুর বাংলাদেশে পাওয়া যায়। তবে, সব ধরনের খেজুরের কয়েকটি গ্রেডে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। খেজুরের কোয়ালিটি ও সাইজের ভিত্তিতে গ্রেড নির্ধারন করা হয়। ফলে, একই জাতে খেজুর গ্রেড ভিন্ন হওয়ার কারনে দামের তারতম্য দেখা যায়।

খেজুরের উপকারিতা

  • খেজুর হৃৎপিণ্ডর কার্যকারিতা বাড়ায় এবং হৃৎপিণ্ডকে শক্তিশালী করে 
  • খেজুর শরীরে পটাশিয়াম এবং সোডিয়ামের সমতা রক্ষা করে
  • খেজুর পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে
  • খেজুরে আয়রন থাকে বিধায় রক্তশূন্যতা দূর করতে পারে
  • খেজুরে ক্যালসিয়াম থাকে বিধায় হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে
  • খেজুর শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে
  • খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে বিধায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। সেক্ষেত্রে খেজুরের সাথে প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে হবে
  • খেজুর মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে
  • খেজুর মুখের রুচি বৃদ্ধি করে
  • খেজুর বদহজম থেকে বাচতে সাহায্য করে 
  • খেজুর দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে খেজুর সহায়তা করে
  • খেজুর খুসখুসি কাশি দূর করতে সাহায্য করে

খেজুর খাওয়ায় সতর্কতা

  • ডায়বেটিস রোগীরা খেজুর খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
  • দেহে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকলে খেজুর খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন
  • মাইগ্রেন সমস্যা রয়েছে এমন রোগীরা খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করুন
  • খেজুর খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে

বাংলাদেশে খেজুরের দাম কত?

বাংলাদেশে খেজুরের ধরন ও মানের উপর নির্ভর করে  প্রতি কেজি ২০০ টাকা থেকে ২,৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। বিশেষ করে আজওয়া খেজুর মানের ভিন্নতার কারনে প্রতি কেজি ৯৫০ টাকা থেকে ১,৩৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। সবচেয়ে কম দামে পাওয়া যায় জাহিদি খেজুর যা স্থান ভেদে প্রতি কেজি ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। এবং, আম্বর খেজুরের দাম তুলনামূলক সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। প্রতি কেজি আম্বর খেজুরের দাম ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়।