বাংলাদেশে আমাদের দৈনন্দিন জিবনে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিটি, ফোনে কথা বলা, ভিডিও দেখা সব কিছুতেই মোবাইল ফোন ব্যবহারে করে থাকি বিশেষ করে স্মার্টফোনে। তাই কেনার আগে ব্র্যান্ড, মডেল, ডিজাইন, বাজেট, ইত্যাদি বিবেচনা করে কিনতে হয়। তাই জেনে নিন বাংলাদেশে ভালো মানের মোবাইল কেনার কিছু টিপস।
বাংলাদেশে মোবাইলের দাম কত?
বাংলাদেশে মোবাইলের দাম ৩,০০০ টাকা থেকে শুরু করে যা দুর্দান্ত কল করতে পারে এবং অল্প কিছু স্মার্টফোনের সুবিধা পাওয়া যায়। তার মধ্যে কিছু মোবাইলে বাটন থাকতে পারে। বিডিতে একটি ভালো মানের স্মার্টফোনের দাম হবে কমপক্ষে ১০,০০০ টাকা যাতে ফুল এইচডি টাচস্ক্রিন এবং স্মার্ট অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে। যদি বাজেট কম থাকে আর একটি ভাল স্মার্টফোন পেতে চান তবে একটি টিপ হল যে পুরানো মডেলের ফ্ল্যাগশিপ মোবাইল কেনা যাতে কম টাকায় আরও ভাল মানের হার্ডওয়্যার পেতে পারেন।
৩০০০ টাকায় কি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল পাওয়া যায়?
হ্যাঁ, বাংলাদেশে ৩০০০ টাকার মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল পাওয়া যায়, যা ছোট ডিসপ্লে, কম-রেজোলিউশনের ক্যামেরা এবং সীমিত স্টোরেজের মতো মৌলিক বৈশিষ্ট্য সহ এন্ট্রি-লেভেল স্মার্টফোন। তবে বাংলাদেশে ৩০০০ টাকা বাজেটের মধ্যে মান সম্পন্ন কিছু বাটন মোবাইল পাওয়া যায়, যাতে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের সুবিধা পাওয়া যায়। এছাড়াও জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেট প্লেস বিডিস্টলকম থেকে পছন্দ ও বাজেট অনুযায়ী সাশ্রয়ী দামে নতুন ও পুরাতন এন্ড্রয়েড মোবাইল সংগ্রহ করতে পারবেন।
কম দামি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল কেমন?
বাংলাদেশের বাজারে কম দামে বেশ কিছু ব্র্যান্ডের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল পাওয়া যায়, তবে এগুলো বেশিরভাগ চায়নার তৈরি। তাছাড়া, বাংলাদেশেরও কিছু কোম্পানি পার্টস সংযোজন করে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল তৈরি করছে যা দেশের বাজারে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এখন ৫,০০০-৮০০০ টাকার মধ্যে সিম্ফোনি ,শাওমি, অপ্পো, ভিভো সহ জনপ্রিয় কিছু ব্র্যান্ডের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল পাওয়া যায়। এছাড়াও চায়নার নন-ব্র্যান্ডের মোবাইল ৫,০০০ টাকার নিচে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে সর্বনিম্ন কত দামে লেটেস্ট মোবাইল পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে লেটেস্ট মোবাইলের দাম মোবাইলের ব্র্যান্ড এবং সিরিজের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে লেটেস্ট মোবাইলের দাম ১০,৪৯০ টাকা থেকে শুরু, যা সাধারণত এন্ড্রয়েড সিস্টেম, আইপিএস টাচস্ক্রীন টেকনোলজি, ৪ জিবি র্যাম, ১২৮ জিবি রম ইত্যাদি সমন্বয়ে পাওয়া যায়।
নতুন এবং পুরাতন মোবাইলের মধ্যে দামের কেমন পার্থক্য হয়ে থাকে?
বাংলাদেশে পুরাতন মোবাইলের দাম নতুন মোবাইলের তুলনায় চেয়ে ৪০% কম হয়ে থাকে। সাধারণত নতুন মোবাইল ফোন ব্যবহৃত বা পুরানো মডেলের মোবাইলের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল হয়। এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক ভালো মানের নতুন মোবাইল পাওয়া যায় যার দাম ১৫,০০০-২৫,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
মোবাইলের ফিক্সড ব্যাটারি কি পরিবর্তন করা যায়?
হ্যা, মোবাইলের ফিক্সড ব্যাটারি অবশ্যই পরিবর্তন করা যায়। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরণের ভীতি রয়েছে, যে মোবাইলের ফিক্সড ব্যাটারি রিপ্লেস করা যায় না। তবে, নির্দিষ্ট সময় পর ব্যাটারি স্থায়িত্ব কমে কিংবা নষ্ট হয়ে গেলে, বাংলাদেশে কম দামে চায়না ব্যাটারি রিপ্লেস করে নেওয়া যায়। তাছাড়া, বর্তমান সময়ে মোবাইলের ফিক্সড ব্যাটারি যথেষ্ট দীর্ঘস্থায়ী হয়, যা অনায়সে ৩-৪ বছর ব্যবহার করা যায়।
ফ্ল্যাগশিপ সিরিজ কি?
ফ্ল্যাগশিপ সিরিজ হচ্ছে প্রত্যেকটি ব্র্যান্ডের জনপ্রিয় মডেলের মোবাইল, যা বাজারে অন্যান্য মডেলের ফোনের সাথে কম্পিটিশন করে থাকে। বর্তমানে প্রায় সকল ব্র্যান্ডের ফ্ল্যাগশিপ মোবাইল পাওয়া যায়, যার দাম সাধারণত অন্যান্য মডলের স্মার্টফোনের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ফ্ল্যাগশিপ সিরিজের মোবাইলের দাম ২৫,০০০-১০০,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
মোবাইলের ফোন কেনার আগে কি কি বিবেচনা করতে হবে?
একটি মোবাইল ফোন কেনার আগে অনেক গুলো বিষয় জেনে কেনা উচিৎ। কেননা এই বিষয় গুলো জানা না থাকলে সঠিক মোবাইল ফোন কেনা কোনো ভাবেই সম্ভব হবে না। নিচে মোবাইল ফোন কেনার আগে যা যা জানতে হবে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
১। ব্যবহারের ধরণঃ মোবাইল ফোন কেনার আগে জানতে হবে এটির ব্যবহারের ধরণ সম্পর্কে। বাটন ফোন অথবা টাচস্ক্রীন ফোন যেটাই কেনা হোক না কেন আগে দেখতে হবে এটি কোথায় ও কীভাবে ব্যবহার করা হবে। শুধুমাত্র কথা বলার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইলে বাটন মোবাইল গুলোই যথেষ্ট হবে। বাটন ফোন ২য় ফোন হিসেবে দারুণ। বাংলাদেশের অনেক প্রবীণ মানুষ কম দাম এবং ব্যবহারযোগ্য বৈশিষ্ট্যটির জন্য বাটন ফোন পছন্দ করেন। কিছু বাটন ফোন আকারে খুব ছোট বলে বাংলাদেশে এগুলো মিনি ফোন নামে পরিচিত। তবে অন্যান্য কাজ করার ক্ষেত্রে যেমনঃ ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে চাইলে টাচস্ক্রীন ফোন সবচেয়ে সেরা কারণ এটি শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম যেমন অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, টাইজেন দ্বারা চালিত। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক বাটন ফোন পাওয়া যায় যাতে এসব সুবিধা আছে তবে টাচস্ক্রীন ফোনে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে। তাই আগে বিবেচনা করে নিতে হবে মোবাইল ফোন কোন কাজে ব্যবহার করা হবে।
২। স্পীকারঃ মোবাইল কেনার আগে অবশ্যই স্পীকারের মান চেক করে নিতে হবে। কারণ স্পীকার যদি ভালো না থাকে তাহলে কথা বা কোনো অডিও স্পষ্ট ভাবে শোনা যাবে না। বিশেষ করে বাংলাদেশের শহরে শব্দের মাত্রা বেশি তাই লাউডার স্পিকার ভালো কাজ করে।
৩। ব্যাটারিঃ বাটন মোবাইল হোক বা স্মার্টফোন, যেকোনো মোবাইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো ব্যাটারি। একটি মোবাইলের ব্যাটারি ব্যাকআপ কেমন সেটির উপর নির্ভর করে মোবাইলের সকল কর্মদক্ষতা। স্মার্টফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ অনেক থাকে তবে বর্তমানের বাটন মোবাইল গুলোও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। ৫২০০ মিলি এম্পিয়ারের বাটন মোবাইল এবং স্মার্টফোন পাওয়া যায় বাংলাদেশের বাজারে। তাই যে মোবাইলই কেনা হোক না কেন দেখে নিতে হবে ব্যাটারি মিলি এম্পইয়ার কত।
৪। চার্জ টাইমঃ স্মার্টফোনের উন্নতির সাথে সাথে এর ব্যবহারও বেড়ে গিয়েছে তাই এটি দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছে। তাই বার বার চার্জ এর প্রয়োজনহ হয়। এই চার্জ করতে গেলে প্রয়োজন ২/৩ ঘন্টা সময় কিন্তু আধুনিক অনেক মোবাইল দ্রুত চার্জিং প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। ফলে খুব আল্প্ সময়ের ভিতর এটি সম্পূর্ণ চার্জ করতে পারে। আর এতে সময় যেমন বাঁচে তেমনি ব্যবহারেও অনেক সুবিধা। তাই মোবাইল কেনার আগে এটি ফাস্ট চার্জ সাপোর্ট করে কিনা দেখে কিনলে ভাল হয়। তবে এই সুবিধাটুকু সাধারণত একটু ভাল দামের মোবাইলে পাওয়া যায়।
৫। নেটওয়ার্কঃ বাংলাদেশে বর্তমানে ৩জি, ৪জি এবং ৫জি নেটওয়ার্ক আছে। আপনার বাজেট অনুযায়ী সর্বোচ্চটি কেনার চেষ্টা করুন। এবং মনে রাখবেন যে উপরের সংস্করণটি নিম্ন সংস্করণকে সমর্থন করবে, যার অর্থ আপনি যদি ৫জি গ্রহণ করেন তবে আপনি ৪জি এবং ৩জি চালাতে পারেন।
৬। ডুয়াল সিমঃ বাংলাদেশে নতুন যেসব মোবাইল ফোন পাওয়া যায় তার অধিকাংশই ডুয়েল সিম। যাইহোক, কিছু সেট এক সিমের হতে পারে। ব্যবহৃত মোবাইল যেগুলো সাধারণত বিদেশ থেকে আমাদানি করে বিক্রি হয় সেগুলো সিঙ্গেল সিমের হয়ে থাকে।
৭। ডিসপ্লের সাইজঃ যদি ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করেন তবে বড় স্ক্রীনের মোবাইল যেমন সর্বনিম্ন ৫-৬ ইঞ্চির নেয়া উচিৎ। আইফোন এবং কিছু পুরাতন মডেলের মোবাইলের স্ক্রীন অনেক ছোট হয়ে থাকে। তবে সেগুলো বেশ বহনযোগ্য। ডিসপ্লের সাইজের উপর নির্ভর করে স্মারটফোনের দাম কম বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত বাংলাদেশে ৬ ইঞ্চি বা তার বেশি সাইজের ডিসপ্লেযুক্ত মোবাইলের দাম ১০,০০০ টাকার বেশি হয়ে থাকে।
৮। রেজোলিউশনঃ বর্তমানের বেশিরভাগ মোবাইল এইচডি স্ক্রিনের হয়ে থাকে। তবে ফুল এইচডি আপনাকে আরও ভালো কোয়ালিটি দেবে।
৯। সুরক্ষাঃ গরিলা বা অন্যান্য সুরক্ষিত কাচ থাকলে আলাদা করে আর স্ক্রীন প্রটেকটর এর দরকার নেই।
১০। স্ক্রীনের ঘনত্বঃ এই বিষয়টি অনেকে গুরুত্ব দেয় না কিন্তু এটি দিয়েই স্ক্রীনের মান নির্ণয় করা যায়। সর্বনিম্ন ২৬০ পিপিআই নেয়ার চেষ্টা করবেন। আর ৪০০ পিপিআই হলে খুব ভাল কোয়ালিটির ছবি দেখতে পারবেন।
১১। র্যামঃ সাধারণ অ্যাপ্লিকেশানগুলো চালাতে ২ জিবিই যথেষ্ট। তবে ৩ জিবি হলে ভাল হয়। আর মোবাইলে আধুনিক গেম খেলতে হলে ৪ জিবি থাকা দরকার।
১২। স্টোরেজঃ সর্বনিম্ন ১৬ জিবি হলে চলবে। আর অতিরিক্ত স্লট আছে কিনা দেখে নিন। যদি না থাকে তবে ১৬ জিবির বেশি নিলে ভাল হয়। পুরাতন মডেলের মোবাইলে সাধারণত কম স্টোরেজ থাকে তবে কার্ড স্লট থাকে।
১৩। প্রসেসরঃ ডুয়েল কোর একটু স্লো হতে পারে তবে বাজেট কম হলে চলবে। আর কোয়াড কোর সিপিউ হলে ভাল চলবে। নতুন মডেলের মোবাইলে অক্টাকোর সিপিউ থাকে। গেমিং করার জন্য মূলত ভালো প্রসেসর যুক্ত মোবাইল কেনা উচিত। আর, বাংলাদেশে শক্তিশালী গেমিং প্রসেসর যুক্ত মোবাইলের দাম ২০,০০০ টাকার উপরে।
১৪। ক্যামেরাঃ মেগাপিক্সেল দেখে নয় ক্যামেরার লেন্স কোয়ালিটি দেখে কিনুন। রাতে বা অল্প আলোয় ছবি তুলুন তাতে আপনি ক্যামেরার লো-লাইট পারফর্মেন্স সম্বন্ধে জানতে পারবেন।
১৫। সেন্সরঃ ডিজিটাল কম্পাস, গাইরোস্কোপ, এসপিও2 বা পাল্স অক্সিমিটার, অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকার থাকলে আপনি অনেক কাজে সুবিধা পাবেন।
১৬। ফ্ল্যাশ লাইটঃ ফ্ল্যাশলাইট অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। ফ্ল্যাশলাইট ভাল এমন মোবাইল কেনা উচিৎ কারণ কোনো অন্ধকার স্থানে ফ্ল্যাশলাইটের আলো পাওয়া যাবে খুব সহজেই। ভ্রমণের সময় অথবা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে ফ্ল্যাশলাইট অনেক উপকারে আসে।
মোবাইল ব্যবহারে কী কী সতর্কতা?
- ভালো মানের মোবাইল কিনুন নাহলে রেডিয়েশনের ক্ষতি হতে পারে। পরীক্ষা করুন SAR যেন 1.6 এর বেশি না হয়।
- ভাল মানের স্ক্রীন প্রয়োজন অন্যথায় এটি অতিরিক্ত ব্যবহারের জন্য আপনার চোখের ক্ষতি করতে পারে।
- চার্জ করার সময় মোবাইল নেটওয়ার্কে কথা বলবেন না।
- ঘুমানোর সময় মাথার কাছে মোবাইল চার্জ করবেন না।
- ব্যাটারি ফুলে গেলে অবিলম্বে প্রতিস্থাপন করুন অন্যথায় এটি যে কোনো সময় ফেটে যেতে পারে।
- মোবাইল ব্যবহারের পরে এটি গরম হতে পারে তাই ঠান্ডা হতে দিন এবং তারপর চার্জ করুন।
- আপনার মোবাইলে সুরক্ষিত স্ক্রিন থাকলে সস্তা সুরক্ষা গ্লাসের প্রয়োজন নাও হতে পারে। আপনি যদি এটি সেট আপ করেন তবে মনে রাখবেন যে আপনি মানসম্পন্ন পর্দা উপভোগ করতে পারবেন না।
- আপনার স্মার্টফোনটি দীর্ঘ সময়ের জন্য বাচ্চাদের দেবেন না কারণ এটি তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করবে। বিশেষ করে বাংলাদেশে, এটি অভিভাবকদের জন্য একটি বড় সমস্যা।
- আপনি যদি বাংলাদেশে ব্যবহৃত স্মার্টফোন কেনেন তাহলে আসল প্যাকেট সহ কিনুন বা IMEI নম্বর সহ রসিদ সংগ্রহ করুন।