একটি টিভি আপনার বাড়িতে বিনোদনের মাত্রা অনেক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু বাজারে এত এত টিভির মধ্যে আপনার মনের মতো টিভিটি খোঁজে পেতে হলে আপনাকে টিভির ফিচার এবং বাংলাদেশে টিভির দাম সম্পর্কে কিছু ধারনা থাকা আবশ্যক। নিচে টিভি সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা হল যা আপনার বাসার জন্য কাঙ্ক্ষিত টিভিটি খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।
কোন প্যানেল প্রযুক্তি সেরা?
টেলিভিশনে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে যেমন সিআরটি, প্লাজমা, এলসিডি, এলইডি, আইপিএস, কিউএলইডি এবং ওএলইডি। বর্তমানে দুটি সর্বাধিক জনপ্রিয় প্রযুক্তি হ'ল এলইডি এবং ওএলইডি। এলইডি টিভিতে "লাইট এমিটিং ডায়ডস" বা এলইডি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় যা পর্দাকে বেশি আলোকিত করে থাকে। এলইডি টিভি স্লিম, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং অধিকতর উজ্জ্বল আলো প্রদান করে। ওএলইডি হল সর্বশেষ আবিষ্কৃত এইচডি প্রযুক্তি যা অধিকতর উজ্জ্বল আলোর সাহায্যে বাস্তবধর্মী ছবি প্রদর্শন করে। ওএলইডি টিভি এর কন্ট্রাস্ট রেশিও অনেক বেশি। কিউএলইডি টিভি ওএলইডি এর তুলনায় অনেক সস্তা এবং এর আয়ুষ্কাল দীর্ঘ, উজ্জ্বল, চোখের জন্য ভালো এবং গেমিংয়ের জন্য ভালো।
আমার কোন সাইজের টিভি দরকার?
বর্তমানে ৩২” ইঞ্চি থেকে ৭৫” ইঞ্চির টেলিভিশন পাওয়া যায়। মূলত টিভির সঠিক সাইজ নির্ভর করে আপনার রুমের সাইজ এবং দেখার দূরত্বের উপর। আপনার টিভি যদি রুম এর তুলনায় অত্যধিক ছোট বা বড় হয়, তাহলে আপনার টিভি দেখে ভালো অভিজ্ঞতা হবে না। উদাহরণস্বরূপ, এইচডি মানের চিত্রের জন্য ৩২ ইঞ্চি টিভি ৫ ফুট দূরত থেকে এবং ৬৫-ইঞ্চি টিভি ৭.৫ ইঞ্চি দূরত্ব থেকে দেখা উচিত। আরও উচ্চতর রেজোলিউশনে ভাল দেখার জন্য অধিক দূরত্বের প্রয়োজন হতে পারে।
সাধারণ টিভি নাকি স্মার্ট টিভি - কোনটি কেনা উচিত?
সাধারণ টিভিতে কেবল টিভি স্টেশন থেকে পাঠানো শব্দ ও ছবি দেখা যায়। টেলিভিশন এখন শুধুমাত্র সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। টিভি ইন্টারনেটে যুক্ত করে ইউটিউব, নুলি, নেটফ্লিক্স প্রভৃতি ভিডিও নেটওয়ার্ক উপভোগ করা যায়। তবে কিছু টিভিতে ইউএসবি সুবিধা থাকে ফলে পেন ড্রাইভ অথবা হার্ডডিস্কের সাহায্যে ভিডিও ফাইল চালানো যায়। আর স্মার্ট টিভি ইন্টারনেটে সংযুক্ত থাকে স্মার্ট কানেকটিভিটির সাহায্যে যেমন ওয়াইফাই, ইউএসবি, ল্যান, এবং স্মার্ট ওএস যার ফলে ওয়েব ব্রাউজিং, ইউটিউবের মতো ওয়েব ভিডিও, সামাজিক নেটওয়ার্কিং, এবং অনলাইন গেমিং উপভোগ করা যায়। তবে আপনি যদি ইতিমধ্যে সাধারণ টিভি কিনে থাকেন তবে আপনার টিভি পরিবর্তন করার দরকার নেই আপনি আপনার নিয়মিত টিভিটিকে স্মার্ট টিভিতে রূপান্তর করতে স্মার্ট টিভি বক্স ব্যবহার করতে পারেন।
কোন রেজোলিউশন সেরা?
রেজোলিউশন যত বেশি হবে তত ভাল চিত্র। ৩ ধরণের রেজোলিউশন পাওয়া যায়। ৭২০ পি, ১০৮০ পি এবং ৪-কে। এগুলি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পিক্সেল বহন করে। পিক্সেল তত বেশি, চিত্রের মানের আরও ভাল। এখন ৪কে টিভি সবচেয়ে ভাল মানের ছবি প্রদর্শন করে।
টিভিতে কোন ধরণের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়?
অ্যান্ড্রয়েড, তিজেন, ওয়েবওএস প্রায়শই টিভি অপারেটিং সিস্টেম হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড টিভি বেশি জনপ্রিয়।
বাংলাদেশে টিভি কেনার বাজেট কত হওয়া উচিত?
বাংলাদেশে টিভির দাম ৪,৫০০ টাকা থেকে শুরু যা একটি ২১ ইঞ্চি টিভি এবং এটিতে এচডি মানের ছবি এবং স্টেরিও সাউন্ড আছে। একটি ৩২-ইঞ্চি টিভির দাম কমপক্ষে ৭,৫০০ টাকা এবং এটিতে ফুল এইচডি ছবি, ইউএসবি পোর্ট এবং এলইডি প্রযুক্তি আছে। ৪৩-ইঞ্চি থেকে ৫৫-ইঞ্চি টিভির দাম সাধারণত ১৫,৯০০ টাকা থেকে ৭০,০০০ টাকা পর্যন্ত এবং যত বেশি দামি হবে ছবির মান তত ভালো হবে। বাজেট যাই হোক না কেন, বাংলাদেশে টিভি কেনার সময় এমন টিভি কেনা উচিত যা ভালো মানের ছবি প্রদর্শন করে।
টিভির আর কোন বৈশিষ্ট্যগুলি দরকার?
রিফ্রেশ রেটঃ রিফ্রেশ রেট সাধারণত এলসিডি এবং এলইডি টিভিতে দেয়া হয়। রিফ্রেশ রেট হল প্রতি সেকেন্ডে কতগুলো ইমেজ চালনা করতে সক্ষম বা দেখাতে সক্ষম তার পরিমান। সুতরাং, ৬০এইচজেড ফ্রেম রেট মানে প্রতি সেকেন্ডে ৬০টি ইমেজ দেখানোকে বোঝানো হয়। এটি তখনই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে যখন আপনি কোনও ফাস্ট অ্যাকশান দেখেন। যেমন গেমস, অথবা অ্যাকশান মুভি।
৩ডি ভিডিওঃ সামঞ্জস্যপূর্ণ ৩ডি চশমা পরে ত্রিমাত্রিক ভিডিও দেখা যায়। তবে ভিডিওটিকে অবশ্যই ৩ডি ছবি সমর্থন করতে হবে।
কার্ভড স্ক্রীনঃ কার্ভড টিভিতে বাঁকা ডিজাইনের স্ক্রিন রয়েছে যা সমস্ত কোণ থেকে দেখতে দুর্দান্ত দেখায়।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডঃ বর্তমান বাজারে বিভিন্ন প্রযুক্তি অনেক টিভি পাওয়া যায় তার মধ্যে সনির ব্রাভিয়া, স্যামসাং এর ইউডিএইচ কার্ভড টিভি, এলজি টিভি, শাওমির এমআই টিভি, তোশিবা টিভি, ফিলিপস টিভি, টিসিএল টিভি। তবে সনির ব্র্যাভিয়া ভালো মানের ছবি প্রদর্শন করে বিধায় এটি অধিক জনপ্রিয়। এছাড়াও, চীনের তৈরি টিভি ভাল মান এবং কম দামের জন্য সেরা বিধায় এখন চায়না টিভি বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
পোর্টঃ আপনার টিভিটিতে এইচডিএমআই পোর্ট প্রয়োজন হতে পারে বিভিন্ন ডিভাইস সংযুক্ত করার জন্য যেমন এ / ভি রিসিভার, ব্লু-রে প্লেয়ার বা গেমিং কনসোলে কাজেই ৪-কে ব্যান্ডউইথ সমর্থন করে এমন এইচডিএমআই সুবাধাযুক্ত টিভি কিনুন।