bdstall.com

ওয়াকিটকি এর দাম | দ্বি-মুখী রেডিও

আইটেম ১-১ এর ১

ওয়াকিটকি হচ্ছে মোবাইল, টেলিফোন এর মত কার্যকর কমিউনিকেশন ডিভাইস। এটি মূলত পোর্টেবল, হ্যান্ডহেল্ড রেডিও ডিভাইস যা নির্দিষ্ট এরিয়াতে অবস্থান করা ব্যাক্তিদের মধ্যে তারবিহীন যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করে। বাংলাদেশে সাধারণত জনসাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ফায়ার সার্ভিস এবং সামরিক বাহিনীতে ওয়াকিটকি ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, বাংলাদেশে বিটিআরসি থেকে নির্ধারিত লাইসেন্স নিয়ে কন্সট্রাকশন সাইট, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, শপিংমল, গার্মেন্টস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ার সহ আউটডোরে বড় পরিসরের প্রোগ্রাম পরিচালনা করার কাজে ওয়াকিটকি ব্যবহার করা যায়।

ওয়াকিটকির সুবিধা কি?

১। প্রত্যন্ত গ্রাম কিংবা পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান করার ক্ষেত্রে যদি স্বাভাবিক যোগাযোগের সমস্যা হয়, সেক্ষেত্রে ওয়াকিটকি ঐ নির্দিষ্ট এরিয়াতে অবস্থানকারী নির্দিষ্ট সংস্থার লোকদের মধ্যে নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রদান করে।

২। জুরুরী পরিস্থিতি যেমন ঘূর্ণিঝড়, বন্যার প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাধারণ মানুষের জান মাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, উদ্ধারকারী দল এবং ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থা সমূহের মধ্যে দ্রুত যোগাযোগের সহায়তা করে।

৩। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নজরদারী এবং তথ্য আদান প্রদানে নিয়োজিত নিরাপত্তী কর্মী, পুলিশ এবং অন্যান্য সামরিক বাহিনীর নিজেদের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগের জন্য জনপ্রিয় ও কার্যকর ডিভাইস হচ্ছে ওয়াকিটকি।

৪। বিভিন্ন ইভেন্ট, জনসমাবেশ সঠিক ভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ওয়াকিটকি ইভেন্ট স্টাফ, স্বেচ্ছাসেবক এবং নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে সহায়তা করে।

৫। তাছাড়া, কন্সট্রাকশন সাইট, গার্মেন্টস এবং অন্যান্য বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়াতে ইঞ্জিনিয়ার, কর্মী, এবং পরিচালনাকারীদের মধ্যে ওয়াকিটকি কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রদান করে।

৬। ওয়াকিটকি ব্যবহারে সাধারণত মোবাইলফোনের তুলনায় খরচ অনেক কম হয়ে থাকে।

৭। এছাড়াও, ওয়াকিটকি শক্তিশালী ব্যাটারি দিয়ে তৈরি হওয়ায়, দৈনন্দিন ব্যবহারে বার বার চার্জ করার প্রয়োজন হয় না।

বাংলাদেশে ওয়াকিটকি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিটিআরসি কি কি ধরণের লাইসেন্স প্রদান করে?

ইন্ডিভিজুয়াল ফ্রিকুয়েন্সিঃ এই ধরণের লাইসেন্স মূলত সরকারী, আধা-সরকারি, এয়ারলাইন্স এর মত প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য। ইন্ডিভিজুয়াল ফ্রিকোয়েন্সি সাধারণত একক চ্যানেল ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া, এই ধরণের লাইসেন্সের আওতায় ব্যবহারকারি যেকোনো কোম্পানির ওয়াকিটকি ব্যবহার করতে পারবে। প্রতি ওয়াকিটকি ব্যবহারের জন্য প্রতি বছর বিটিআরসিকে ৪,৫০০ টাকা জমা দিতে হবে।

শর্ট বিজনেস ফ্রিকুয়েন্সি (এসবিআর)ঃ এই ধরণের লাইসেন্স মূলত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করে। শর্ট বিজনেস ফ্রিকুয়েন্সি লাইসেন্সের ফ্রিকোয়েন্সি ৮০ যা ৮০ টা চ্যানেলে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। ফলে, ব্যবহারকারি যেকোনো চ্যানেল ব্যবহার করতে পারবে। তবে, শর্ট বিজনেস ফ্রিকুয়েন্সি লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারি কালো রঙের ওয়াকিটকি ছাড়া অন্য যেকোনো রঙের ওয়াকিটকি ব্যবহার করতে পারবে।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ওয়াকিটকি ব্যবহারের জন্য অবশ্যই বিটিআরসির লাইসেন্স ইস্যু করতে হবে। তাছাড়া, ওয়াকিটকি ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশে লাইসেন্স ইস্যু করার সহজ বিষয়, পাশাপাশি কোনো টাকা খরচ হয় না।

বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিষয় সমূহ

  • জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
  • প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্সের কপি
  • করদাতার শনাক্তকরণ নাম্বার সহ কপি
  • ভ্যাট নিবন্ধনের অনুলিপি
  • কোম্পানির প্যাডে আবেদনপত্র

এই সব বিষয় সমূহের পাশাপাশি বিটিআরসি থেকে ক্যাটালগ, ফ্রিকোয়েন্সি ফর্ম সংগ্রহ করার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয় সমূহ যথাযথ প্রদান করতে হবে। এছাড়াও, যেকোনো পরিমান ওয়াকিটকি কেনার জন্য বিটিআরসিতে ফাইল প্রসেসিং ফি এবং ফ্রিকোয়েন্সি ফর্ম বাবদ ৬৩২৫ টাকা এককালীন পে অর্ডারের মাধ্যমে জমা করতে হবে।

তথ্যসূত্রঃ বিটিআরসি 

ওয়াকিটকি কেনার আগে যেসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে?

ওয়াকিটকির রেঞ্জঃ ওয়াকিটকি সাধারণত কয়েক ফুট থেকে কয়েক মাইল পর্যন্ত কমিউনিকেশন রেঞ্জ প্রদান করে। তাই ওয়াকিটকি কেনার আগে আপনার প্রয়োজনীয় যোগাযোগের দূরত্ব এবং ডিভাইসটির রেঞ্জ যাচাই করতে হবে।

ফ্রিকুয়েন্সি এবং চ্যানেলঃ ওয়াকিটকি বিভিন্ন ফ্রিকুয়েন্সির পাশাপাশি একাধিক চ্যানেলের হয়ে থাকে। তাই, ওয়াকিটকি কেনার আগে এরিয়া, ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিবেচনা করার পাশাপাশি ওয়াকিটকির ফ্রিকুয়েন্সি এবং চ্যানেল যাচাই করতে হবে।

ব্যাটারিঃ ওয়াকিটকির কিছু মডেলে ডিসপোজাল ব্যাটারি ব্যবহার করে থাকে। তবে, বাংলাদেশে সাশ্রয়ী দামে রিচারজেবল ব্যাটারি যুক্ত ওয়াকিটকি পাওয়া যায়। তাছাড়া, রিচারজেবল ব্যাটারি যুক্ত ওয়াকিটকি দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারের জন্য আদর্শ। তাই ওয়াকিটকি কেনার আগে অবশ্যই ব্যাটারি যাচাই করতে হবে।

সেফটি ফিচারঃ ওয়াকিটকিতে ওয়াটার প্রুফ, শক প্রুফ সহ কঠোর পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য যথাযথ ব্যবহার উপযোগী কিনা তা যাচাই করতে হবে।

সাইজ এবং ওজনঃ ওয়াকিটকি কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই আকারে ছোট এবং হালকা ওজনের বিবেচনা করা উচিত, যা দীর্ঘ সময় বহণ করা যাবে। বাংলাদেশে ওয়াকিটকির দাম সাধারণত ব্র্যান্ড, মডেল, গুণমান, চ্যানেল এবং ফ্রিকুয়েন্সি সহ অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভর করে কম বেশি হয়ে থাকে।

উপরোক্ত বিষয় সমূহ পর্যালোচনা করার পাশাপাশি বিটিআরসি এর লাইন্সেন্স প্রাপ্ত সেলার পয়েন্ট থেকে ওয়াকিটকি কিনতে পারেন।

কিভাবে ওয়াকিটকি ম্যাইন্টেন্যান্স করবেন?

ওয়াকিটকির সর্বোত্তম কর্মক্ষমতা ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারের নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ অপরিহার্য। ওয়াকিটকি যথাযথ ম্যাইন্টেনেন্স করার জন্য নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ অনুসরণ করতে হবে।

  • ওয়াকিটকি নিয়মিত নরম, শুকনো কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে, যাতে ওয়াকিটকির উপর কোনো ধুলো বালি কিংবা ময়লা না জমে।
  • ওয়াকিটকি পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে ডিভাইসের ভিতরে কিংবা বাইরের কোনো অংশে ক্ষতি করবে এমন ক্লিনিং এজেন্ট বা দ্রাবক ব্যবহার করা যাবে না।
  • ওয়াকিটকি ব্যবহারের পূর্বে সম্পূর্ণ চার্জ করে নিতে হবে এবং নিয়মিত ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাটারি চার্জ পুরোপুরি শেষ করা যাবে না। তাহলে, ওয়াকিটকির ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার উপযোগী থাকবে।
  • যদি দীর্ঘ সময় ওয়াকিটকি ব্যবহারের প্রয়োজন না হয়, সেক্ষেত্রে ব্যাটারিটি খুলে শীতল, শুকনো জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে।
  • তাছাড়া, ওয়াকিটকি ব্যবহারে চরম তাপমাত্রা বা আর্দ্রতা এড়িয়ে চলা উচিত। ফলে, ডিভাইসের উপাদানগুলো সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
  • ওয়াকিটকি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডিভাইসের পারফরম্যান্সের সাথে কোনো সমস্যা যেমন বিকৃত শব্দ, রেঞ্জ আপ ডাউন এর মত সমস্যা দেখা দিলে প্রফেশনাল কারোর সহায়তা নিতে হবে।