
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিটি শিশু জন্ম গ্রহণের পর থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। সরকার এটি আইনত বাধ্যতামূলক করেছে। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিবন্ধন সম্ভব না হয়, তবে যত দ্রুত সম্ভব জন্ম নিবন্ধন করে নিতে হবে। এখন আর ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভায় ঘুরে সময় নষ্ট করতে হবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশে ঘরে বসে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা যায়। এতে সময় বাঁচে, খরচও কম হয়। অনলাইনে আবেদন করলে মাত্র ২৫-৫০ টাকায় কাজ হয়ে যায়, যেখানে ইউনিয়ন পরিষদে বাড়তি খরচ দিতে হয়।
নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন যেভাবে করবেন
- নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার জন্য, প্রথমে আপনার মোবাইল বা ল্যাপটপ এর যেকোনো ব্রাউজার ওপেন করে bdris.gov.bd/br/application - লিংকে ভিজিট করবেন।
- এরপর জন্ম নিবন্ধনের ঠিকানা সিলেক্ট করবেন, নিবন্ধনকারী শিশু বা ব্যক্তির নাম বাংলা এবং ইংরেজীতে লিখতে হবে, জন্ম তারিখ, বাবা-মার কততম সন্তান, ঠিকানা ও পিতা-মাতার তথ্য পূরণ করতে হবে।
- তারপর আবেদনকারীর প্রত্যয়ন দিয়ে ডকুমেন্টস আপলোড করে, আপনার শিশু বা ব্যাক্তির আবেদনটি পুনরায় রিভিউ করবেন। সর্বশেষে, আপনার মোবাইল নাম্বারে পাওয়া ওটিপি কোড দিয়ে ভেরিফাই করে শিশুর জন্ম নিবন্ধন আবেদন সাবমিট করবেন।
- আবেদনপত্রের যাবতীয় বিষয় সমূহ সঠিক হলে, জন্ম নিবন্ধন কপি প্রিন্ট করে আপনার এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভায় জমা দিবেন পাশাপাশি ফি জমা দিবেন। শিশুর জন্ম নিবন্ধনে তথ্যসমূহ সঠিক থাকলে ৭ দিনের মধ্যেই নতুন জন্ম সনদ পেয়ে যাবেন।
জন্ম নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় যেসব কাগজপত্র লাগে
শিশুর বয়স ০ - ৪৫ দিন হলে -
- ইপিআই টিকা কার্ড বা হাসপাতালের প্রত্যয়নপত্র
- ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ
- বাবা-মায়ের ডিজিটাল জন্ম সনদ ( বাধ্যতামূলক লাগবে )
- মোবাইল নম্বর
শিশুর বয়স ৪৬ দিন থেকে ৫ বছর হলে-
- ইপিআই টিকা কার্ড বা হাসপাতালের প্রত্যয়নপত্র
- ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ
- বাবা-মায়ের ডিজিটাল জন্ম সনদ ( বাধ্যতামূলক লাগবে )
- যদি শিক্ষার্থী হয়, তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যয়নপত্র
- মোবাইল নম্বর
শিশুর বয়স ৫ বছরের বেশি হলে -
- রেজিস্টার্ড এমবিবিএস ডাক্তারের সত্যায়িত প্রত্যয়নপত্র ( বয়স প্রমাণ করার জন্য )
- জেএসসি/ এসএসসি সার্টিফিকেট (অপশনাল)
- বাবা-মায়ের ডিজিটাল জন্ম সনদ ( বাধ্যতামূলক লাগবে )
- ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ
- মোবাইল নম্বর
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার ধাপসমূহ
স্টেপ-১ঃ জন্ম নিবন্ধন ওয়েবসাইট ভিজিট
জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার জন্য প্রথমেই bdris.gov.bd/br/application -এই লিংকে ভিজিট করতে হবে। তারপর রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয়ের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সম্পর্কিত ওয়েবসাইটের জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফরম ওপেন করতে হবে।
স্টেপ-২ঃ জন্ম নিবন্ধনের জন্য সঠিক ঠিকানা
এবার আপনার জন্ম নিবন্ধন এর জন্য সঠিক ঠিকানা সিলেক্ট করতে হবে। কারণ এই ঠিকানাতেই আপনার বা আপনার শিশুর জন্ম সনদটি তালিকাভুক্ত হবে। এখানে নিবন্ধনকারী চাইলে তার জন্মস্থান/ স্থায়ী ঠিকানা/ বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাস -এই ৩টি ঠিকানা থেকে যেকোনো একটি সিলেক্ট করতে পারবেন।

স্টেপ-৩ঃ নিবন্ধনকারী ব্যক্তির তথ্যসমূহ
এই ধাপে নিবন্ধনকারী ব্যক্তির পরিচিতির তথ্য গুলো পূরণ করতে হবে। যেমনঃ
- নিবন্ধনকারীর নামের প্রথম ও শেষ অংশ। বাংলায় ও ইংরেজিতে।
- নিবন্ধনকারীর সঠিক জন্ম তারিখ।
- নিবন্ধনকারী ব্যক্তি বা শিশু পিতা মাতার কততম সন্তান।
- নিবন্ধনকারীর লিঙ্গ কি? এসকল তথ্য পূরণ করতে হবে।

স্টেপ-৪ঃ জন্মস্থানের ঠিকানার তথ্য পূরণ
এই ধাপে, আপনার জন্ম নিবন্ধনের জন্য যেই ঠিকানায় সিলেক্ট করেছেন সেই ঠিকানার তথ্যগুলো দিতে হবে। যেহেতু আমরা এই আবেদনের শুরুতে জন্মস্থানের ঠিকানা সিলেক্ট করেছিলাম, তাই আমাদেরকে এই ধাপে জন্মস্থানের ঠিকানার তথ্য দিতে হবে।
এখানে দেশ, বিভাগ, জেলা -এভাবে ধাপে ধাপে সিলেক্ট করার পর পরবর্তী অপশন গুলো আসবে। ঠিকানার ঘরগুলো থেকে লাল (*) চিহ্নিত ঘরগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে।

স্টেপ-৫ঃ নিবন্ধনকারীর পিতা-মাতার তথ্য
এবার, যার জন্ম নিবন্ধন করা হচ্ছে তার বাবা-মায়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো দিতে হবে। পিতা এবং মাতার একইরকম তথ্য গলো পূরণ করতে হবে। এখানে পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিতে হবে। তারপর পিতা-মাতার সঠিক জন্ম তারিখ দিয়ে, বাংলা ও ইংরেজিতে তাদের নাম লিখতে হবে। সর্বশেষে পিতা-মাতার জাতীয়তা সিলেক্ট করবেন।
জন্ম নিবন্ধন আবেদনে পিতা মাতার তথ্য পূরন

স্টেপ-৬ঃ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার তথ্যসমূহ
এই ধাপে, নিবন্ধনকারীর স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা তথ্য দিতে হবে। আগের ধাপে আমরা নিবন্ধন এর ঠিকানা হিসেবে জন্মস্থান সিলেক্ট করেছিলাম। সে জন্মস্থানের ঠিকানার সাথে যদি স্থায়ী ঠিকানার মিল থাকে, তাহলে ‘জন্মস্থানের ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই’ -এমন লেখার পাশের বক্সে ক্লিক করবেন। তথ্যের মিল না থাকলে ধাপে ধাপে স্থায়ী ঠিকানার তথ্য পূরণ করতে হবে।
একইভাবে বর্তমান ঠিকানার তথ্যের সাথে যদি স্থায়ী ঠিকানা বা জন্মস্থানের ঠিকানার মিল থাকে, তাহলে ‘স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা একই’ -এমন লেখার পাশের বক্সে ক্লিক করবেন।
জন্ম নিবন্ধনের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার তথ্য পূরন

স্টেপ-৭ঃ আবেদনকারীর তথ্য পূরণ
অধিকাংশ সময় দেখা যায় যে জন্ম নিবন্ধন করার জন্য কোন শিশুর পক্ষ থেকে তার অভিভাবকরা আবেদন করে থাকে। এই ধাপে সেই আবেদনকারীর তথ্য দিতে হবে। এখানে নিবন্ধনকারীর পিতা-মাতা বা নিবন্ধনকারী নিজে আবেদন করলে পিতা/ মাতা/ নিজ সিলেক্ট করতে হবে। তাহলেই প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ হয়ে যাবে।
এছাড়া অন্য কেউ আবেদন করলে, নিবন্ধনকারীর সাথে আবেদনকারীর সম্পর্ক, আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন নম্বর, নাম ও জন্ম তারিখ পূরণ করে দিতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন আবেদনকারীর প্রত্যয়ন

স্টেপ-৮ঃ প্রমানপত্র/ ডকুমেন্ট আপলোড
এবার জন্ম নিবন্ধন আবেদনের তথ্যগুলোর সত্যতা প্রমাণের জন্য উপযুক্ত কাগজপত্র ছবি আপলোড করতে হবে। যেমন- ইপিআই টিকা কার্ড, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যয়ন পত্র ইত্যাদি।
ডকুমেন্ট আপলোড করার জন্য +সংযোজন লেখাতে ক্লিক করে কম্পিউটারের ফাইল থেকে ডকুমেন্টটি সিলেক্ট করবেন। তারপর ‘File type’ সিলেক্ট করে ‘Start’ বাটনে ক্লিক করে আপলোড করবেন।
জন্ম নিবন্ধন আবেদনের জন্য ডকুমেন্ট আপলোড

স্টেপ-৯ঃ আবেদনের তথ্য পুনরায় যাচাই
আবেদনের সকল তথ্য পূরণ করার পর এই ধাপে আবেদন পত্রটি রিভিউয়ের জন্য দেখানো হবে। এখানে আপনার দেওয়া সকল তথ্য ঠিক আছে কিনা দেখে নিন। কোন তথ্য ভুল হলে, তা সঠিক করে তারপর আবেদন করবেন।
অনলাইন জন্ম নিবন্ধন এপ্লিকেশন রিভিউ

স্টেপ-১০ঃ ওটিপি ভেরিফাই ও আবেদন সাবমিট
আবেদন রিভিউ পেজের নিচের দিকে গেলে ওটিপি যাচাই করার অপশন পাবেন। এখানে সর্বপ্রথম আবেদনকারীর একটি ইমেইল ঠিকানা লিখবেন। তারপর একটি সচল ফোন নাম্বার লিখে ‘ওটিপি পাঠান’ লেখাতে ক্লিক করবেন। আপনার দেওয়া মোবাইল নাম্বারে ৬ ডিজিটের যেই ওটিপি কোড যাবে, সেটি পাশের ঘরে লিখে সাবমিট করবেন।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন আবেদনের ওটিপি ভেরিফিকেশন

স্টেপ-১১ঃ জন্ম নিবন্ধনের আবেদন কপি প্রিন্ট
নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদনের সকল ধাপ সম্পন্ন করে সাবমিট করার পর, একটি কনফার্মেশন পেজ আসবে। এখানে আপনার আবেদনপত্র নম্বর বা অ্যাপ্লিকেশন আইডি দেখতে পাবেন। এখানে ‘ফি প্রদান করুন’ অপশনে ক্লিক করে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন ফি দিতে পারবেন।
এছাড়াও নিচে আবেদনপত্র প্রিন্ট করার অপশন থাকবে। সেখান থেকে আপনার আবেদনের পিডিএফ কপি ডাউনলোড বা প্রিন্ট করে নিবেন। এই কপিটি ইউনিয়ন পরিষদে/ সিটি কর্পোরেশনে/ পৌরসভা কার্যালয়ে জমা দিতে হবে।

বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম
আপনি যদি বাংলাদেশের বাহিরে অন্য কোন দেশে অবস্থান করে থাকেন এবং আপনার বা আপনার শিশুর জন্য বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধন করতে চান তাহলে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইট থেকে সহজেই নিবন্ধন করতে পারবেন। অনেক প্রবাসীদের জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করেও জন্ম সনদের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার জন্য সর্বপ্রথম এই লিংকে- bdris.gov.bd/br/application ভিজিট করবেন। তারপর, জন্ম নিবন্ধন করার ঠিকানা হিসেবে ‘আপনি যদি বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে চান তাহলে এখানে ক্লিক করুন’- এই অপশনটির পাশে থাকা চেকবক্সে ক্লিক করবেন।
বিদেশ থেকে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন

পরবর্তী ধাপে আপনার জন্ম নিবন্ধনের ঠিকানা দিবেন।
বিদেশ থেকে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের জন্য

এক্ষেত্রে অবশ্যই পিতামাতার জাতীয়তা থাকতে হবে। তারপর বাকী তথ্যগুলো পূর্ববর্তী নিয়ম অনুসরন করে পূরন করবেন, এবং সবশেষে ১ মার্কিন ডলার ফি পরিশোধ করে জন্ম নিবন্ধন আবেদন সম্পন্ন করবেন।
জন্ম নিবন্ধন করতে কত টাকা লাগে?
বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত হারে ফি দিতে হয়
নিবন্ধনকারীর বয়স | বাংলাদেশ থেকে | বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে |
০ – ৪৫ দিন | ফ্রি | ফ্রি |
৪৬ দিন – ৫ বছর | ২৫ টাকা | ১ ডলার |
৫ বছরের উর্ধে | ৫০ টাকা | ১ ডলার |
জন্ম নিবন্ধন আবেদনপত্রের স্ট্যাটাস চেক
জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার পরে আবেদনটির অগ্রগতি জানতে, আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা অনলাইনে যাচাই করতে পারবেন। এর জন্য bdris.gov.bd/br/application/status অথবা everify.bdris.gov.bd এই লিংকে ভিজিট করবেন। তারপর আপনার আবেদনপত্রের ধরন, অ্যাপ্লিকেশন আইডি, জন্ম তারিখ দিয়ে সার্চ করবেন। তাহলেই আবেদনটি এপ্রুভ হয়েছে কিনা এবং তার অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন সমূহ
প্রশ্ন: জন্ম নিবন্ধন করতে কত সময় লাগে?
উত্তর: সাধারণত ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন হয়।
প্রশ্ন: জন্ম নিবন্ধন না করলে কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর: স্কুলে ভর্তি, পাসপোর্ট, এনআইডি বা বিভিন্ন সরকারি সেবায় সমস্যা হবে।
প্রশ্ন: অনলাইনে ফি না দিয়ে কি জন্ম নিবন্ধন করা যায়?
উত্তর: না, আবেদন সম্পূর্ণ করতে ফি পরিশোধ বাধ্যতামূলক।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: September 27, 2025