bdstall.com

অনলাইনে জন্ম সনদ কীভাবে চেক করবেন

বর্তমান ডিজিটাল যুগে এনআইডি, জন্ম নিবন্ধন, জায়গা জমির কাগজপত্র সহ অফিশিয়াল সকল কাজের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র অনলাইনে পাওয়া যায়, যা আগেকার দিনে চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। তাই, জন্ম সনদ খুঁজে পেতে এখন আর দিনের পর দিন অপেক্ষা করা বা ফাইল এর পর ফাইল খুঁজে বের করার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ সরকার প্রায় সর্বস্তরের কার্যক্রম অনলাইন ভিত্তিক গড়ে তোলায়, আপনি এখন আপনার কম্পিউটার বা স্মার্টফোন থেকে দ্রুত এবং সহজেই আপনার জন্ম নিবন্ধনের বিবরণ যাচাই করতে পারবেন।

 

বর্তমানে, পাসপোর্ট আবেদনের জন্য, স্কুলে ভর্তির জন্য, অথবা অফিশিয়াল অন্যান্য কাজে রেকর্ডের জন্য জন্ম নিবন্ধন কপির প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্লগে আমরা আপনাকে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন যাচাইকরণের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো, যার মাধ্যমে আপনি মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন যাচাই কপি দেখতে পারবেন।

 

কেন আপনার জন্ম সনদ অনলাইনে যাচাই করা উচিত?

"কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে যাচাই করবেন" এই প্রশ্নে যাওয়ার আগে, আসুন জেনে নেয় “কেন জন্ম যাচাই করা প্রয়োজন”। জন্ম নিবন্ধনে মূলত আমার, আপনার, সকলের ব্যক্তিগত তথ্য (যেমন আপনার নাম, পিতামাতার নাম এবং জন্ম তারিখ) ইত্যাদি সরকারী ডাটাবেসে সঠিকভাবে রেকর্ড করা আছে কিনা তা যাচাই করার সবচেয়ে সহজ উপায়। এটি আপনি যে কোনও সময়, যে কোনও জায়গায়, কোনও সরকারি অফিসে না গিয়ে এই তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারেন। তাছাড়া, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্ড, পাসপোর্ট বা বিবাহের কাবিননামার জন্য আবেদন করার মতো অনেক সরকারী প্রক্রিয়ার জন্য সঠিক জন্ম সনদ প্রয়োজন হয়। তাই, অনলাইনে যাচাই করলে আপনার সময় সাশ্রয় হয় এবং ভবিষ্যতে যেকোনো কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা যায়।

 

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার আগে যা যা প্রয়োজন

জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি যাচাই করা খুবই সহজ, তবে আপনার মূল জন্ম সনদ থেকে দুটি তথ্য অবশ্যই লাগবে।

১। আপনার ১৭-সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নম্বর বিআরএনঃ এটি ইউনিক নাম্বার, যা শুধুমাত্র আপনার জন্ম সনদে পাওয়া যাবে।

 

২। আপনার জন্ম তারিখঃ এটি YYYY-MM-DD ফর্ম্যাটে লিখতে হবে (উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৬-১২-০৪)।

 

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার প্রক্রিয়া সমূহ

স্টেপ ১ঃ প্রথমে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ভিজিট করবেন

আপনার ল্যাপটপ বা মোবাইল এর ওয়েব ব্রাউজার যেমন ক্রোম, ফায়ারফক্স, অথবা সাফারি যেকোনোটি ওপেন করে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন অফিসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://everify.bdris.gov.bd যাবেন। সেখানে প্রথমেই আপনি যাচাইকরণ পৃষ্ঠাটি দেখতে পাবেন। এটি মূলত সরকারের অফিসিয়াল পোর্টাল ওয়েবসাইট, তাই নিশ্চিত থাকুন যে আপনার তথ্য নিরাপদ।

স্টেপ-২ঃ আপনার তথ্য দিবেন

ওয়েবপেজে, আপনি তিনটি ফাকা ঘর সহ সহজ ফর্ম দেখতে পাবেনঃ

  • জন্ম নিবন্ধন নম্বরঃ এখানে আপনার ১৭-সংখ্যার BRN লিখবেন। তবে, খেয়াল রাখবেন, যেন কোনও স্পেস বা হাইফেন না থাকে।
  • জন্ম তারিখঃ YYYY-MM-DD ফর্ম্যাটে আপনার জন্ম তারিখ লিখবেন। যেমন, যদি আপনার জন্মদিন ৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৬ সাল হয়, তাহলে এটি ১৯৯৬-১২-০৪ এইভাবে লিখবেন।
  • ক্যাপচাঃ এই ফাকা স্থানটিতে সহজ গাণিতিক সমস্যা দেওয়া থাকে যেমন, "৫৩ বিয়োগ ১৫ কত হয়?"। এটি আসলে নিরাপত্তা পরীক্ষার জন্য যাচাই করা হয়, যা প্রমাণ করে যে আপনি রোবট নন। আর, শুধু বাক্সে সঠিক উত্তরটি টাইপ করবেন।

স্টেপ-৩ঃ "সার্চ" অপশনে ক্লিক করে আপনার বিবরণ দেখবেন

তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার পরে, "সার্চ" অপশনে ক্লিক করুন। যদি আপনার দেওয়া তথ্য সরকারি ডাটাবেসের সাথে মিলে যায়, তাহলে আপনার জন্ম নিবন্ধনের তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে স্ক্রিনে দেখতে পাবেন। এটি যে আপনার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাইকরণ কপি তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য দেখতে পাবেন

  • আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর
  • আপনার জন্ম তারিখ
  • আপনার পূর্ণ নাম (ইংরেজি এবং বাংলা উভয় ভাষায়)
  • আপনার লিঙ্গ
  • আপনার পিতামাতার নাম
  • আপনার জন্মস্থান

সবকিছু সঠিক কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য কিছুক্ষণ সময় নিয়ে যাচাই করবেন।

 

যদি আমার জন্ম নিবন্ধন কপি রেকর্ডে খুঁজে না পাওয়া যায়?

  • "কোন রেকর্ড পাওয়া যায়নি" মেসেজ দেখলে চিন্তা করবেন না। এটি যেসব কারণে হতে পারেঃ
    সবচেয়ে সাধারণ ভুল হচ্ছে আপনার ১৭-সংখ্যার বিআরএন এবং জন্ম তারিখ ভুল আছে কিনা তা পুনরায় যাচাই করবেন।
  • এছাড়া, আপনার জন্ম তারিখ YYYY-MM-DD ফর্ম্যাটে আছে কিনা তা যাচাই করবেন।
  • যদি আপনার জন্ম সনদ অনেক বছর আগের হয় এবং ম্যানুয়ালি নিবন্ধন করা হয়, তাহলে এটি এখনও সরকারি সিস্টেমে ডিজিটালাইজ করা নাও হতে পারে।

যদি আপনি সবকিছু যাচাই করে দেখে পুনরায় চেষ্টা করে জন্ম নিবন্ধন কপি দেখতে না পান, তাহলে আপনার জন্ম তারিখ যেখানে মূলত নিবন্ধিত হয়েছিল সেই ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের সাথে যোগাযোগ করবেন। তারা আপনাকে আপনার জন্ম নিবন্ধন রেকর্ড আপডেট বা ডিজিটালাইজ করতে সাহায্য করবেন।

 

জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি ডাউনলোড

everify.bdris.gov.bd এর যাচাইকরণ ওয়েবপেইজটি মূলত আপনাকে আপনার জন্ম নিবন্ধনের যাবতীয় তথ্য যাচাই করতে দেয়। তবে মনে রাখবেন যে এটি কোনও অফিসিয়াল ডকুমেন্ট নয়। আপনি আপনার ব্যক্তিগত রেকর্ডের জন্য এই পেইজটি প্রিন্ট করতে পারেন। জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি প্রিন্ট  করার জন্য আপনার ব্রাউজারের প্রিন্ট ফাংশন ব্যবহার করেঃ Ctrl+P অথবা Cmd+P কমান্ড ব্যবহার করে প্রিন্ট করতে পারবেন। তবে এটি জন্ম নিবন্ধনের অফিসিয়াল কপি হিসেবে গৃহীত হবে না।

 

একটি অফিসিয়াল, সার্টিফাইড জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি নিতে চাইলে, আপনাকে bdris.gov.bd এর মেইন ওয়েবসাইট BDRIS পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। তবে, এর জন্য পৃথক আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে এবং সরকারী ফি প্রদান করতে হবে। অফিসিয়াল কপির জন্য আবেদন করার আগে সবকিছু সঠিক কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন কপির যাবতীয় তথ্য যাচাই করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ।

 

আশা করি, আমাদের এই ব্লগটি অনুসরণ করে আপনি অনলাইনে সহজেই আপনার জন্ম সনদ যাচাই করতে পারবেন।

এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: August 18, 2025
Reviews (0) Write a Review