bdstall.com

নিরাপদ হেলমেট কিভাবে চিনবেন

মোটরবাইক রাইড করার ক্ষেত্রে সুরক্ষা নিশ্চিত করার অন্যতম উপকরণ হচ্ছে হেলমেট। এটি দুর্ঘটনার সময় মাথায় আঘাত পাওয়া থেকে সুরক্ষিত থাকতে সহায়তা করে। নিরাপদ হেলমেট নির্বাচন করা হচ্ছে দায়িত্বশীলভাবে বাইক চালানোর প্রথম পদক্ষেপ। বাংলাদেশে ব্র্যান্ড এবং নন-ব্র্যান্ড সহ প্রচুর চায়না হেলমেট পাওয়া যায়, যা থেকে সঠিক হেলমেট বিবেচনা করা বিভ্রান্তিকর। তাছাড়া, সঠিক এবং নিরাপদ হেলমেট দামে কিছুটা ব্যায়বহুল হয়ে থাকে। তাহলে চলুন, নিরাপদ এবং মানসম্পন্ন হেলমেট কিভাবে চিনবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

 

নিরাপদ হেলমেট চেনার উপায়সমূহ

১। বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের হেলমেট

বাংলাদেশে প্রচুর ব্র্যান্ডের হেলমেট পাওয়া যায়, তবে সবগুলো নিরাপদ নয়। তাই, যে ব্র্যান্ডগুলো বিশ্বস্ত এবং বিখ্যাত, যেমন, ভেগা, স্টাডস, এলএস২, এক্সর, ইয়োহে এবং গ্লাইডারস ইত্যাদি বেছে নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ। এই ব্র্যান্ডগুলো সাধারণত আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেনে হেলমেট তৈরি করেছে।

২। সারটিফিকেশন যাচাই

নিরাপদ হেলমেট কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তার সার্টিফিকেশন যাচাই করা। আপনি কেনার সময় ভালো ভাবে দেখে নিবেন যে হেলমেটটি ডিওটি (ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রান্সপোর্টেশন) অথবা ইসিই (ইকোনিমিক কমিশন ফর ইউরোপ) সার্টিফাইড কিনা। এই সার্টিফিকেশনগুলো দ্বারা হেলমেটটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানদণ্ড পূরণ করেছে কিনা তা নিশ্চিত করে।

৩। সঠিক সাইজ এবং ফিট কিনা

নিরাপদ হেলমেট কেনার ক্ষেত্রে সাইজ সঠিক কিনা তা যাচাই করতে হবে। যদি হেলমেট খুব ঢিলাঢালা হয়, তবে তা আপনার মাথাকে সুরক্ষা দিতে পারবে না। আবার যদি খুব টাইট হয়, তা দীর্ঘ সময় ব্যবহারে অস্বস্তির কারণ হতে পারে। তাই আপনার মাথার সাইজ অনুযায়ী সঠিক ফিটিং এর হেলমেট বিবেচনা করবেন।

৪। ভিতরের ফোমের মান

নিরাপদ হেলমেটের ভিতরে ভালো মানের ফোম থাকতে হবে, যা দুর্ঘটনার সময় আঘাত শোষণ করতে সহায়ক হবে। হেলমেটের ভিতরের ফোম সাধারণত উচ্চমানের ইপিএস (এক্সপান্ডেড পলিস্ট্যারেনে) দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। এটি মাথা সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি হেলমেটের স্থায়িত্ব বাড়ায়।

৫। ভেন্টিলেশন সিস্টেম

গরম আবহাওয়ায় আরামদায়ক ভাবে হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হেলমেটের ভিতরে ভাল ভেন্টিলেশন সিস্টেম রয়েছে কিনা যাচাই করতে হবে। এই ধরণের সিস্টেম মাথা ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং ঘাম জমতে দেয় না, যা দীর্ঘ সময় হেলমেট মাথায় পড়ে থাকলে অস্বস্তি লাগে না।

৬। শেল এবং ডিজাইনে

হেলমেটের বাইরের শেলটি শক্ত এবং দৃঢ় হতে হবে। শেলের উপকরণ যদি পলিকার্বনেট বা এফআরপি (ফাইবার রিইনফোর্সড প্লাস্টিক) দিয়ে তৈরি হয় তাহলে শেল নিরাপদ হবে। এই শেলগুলো আঘাতের সময় শক্তি শোষণ করে মাথা সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।

৭। হেলমেট এর লাইফস্পেন

যদি হেলমেট কখনো দুর্ঘটনার কবলে না পড়ে, তবুও এটি প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন। সময়ের সাথে সাথে মাথার ঘাম, চুলের তেল, পরিষ্কারক পণ্য এবং এমনকি সাধারণ পরিবেশের সংস্পর্শে আসার কারণে হেলমেটের ভিতরে রজন, আঠা এবং ভিতরের ফোম (ইপিএস লাইনার) নষ্ট হয়ে যায়। বেশিরভাগ নির্মাতারা প্রথম ব্যবহারের তারিখ থেকে প্রতি ৩ থেকে ৫ বছর অন্তর অথবা তৈরির তারিখ থেকে প্রায় ৭ বছর অন্তর হেলমেট প্রতিস্থাপন করার পরামর্শ দেন, যা হেলমেটের ভিতরে একটি স্টিকারে লেখা থাকে। এই সময়ের পরে, হেলমেট দুর্ঘটনায় কাঙ্ক্ষিত স্তরের সুরক্ষা প্রদান নাও করতে পারে।

৮। একটি দুর্ঘটনা, একটি হেলমেট

একটি হেলমেট একবার আঘাত থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার সময়, অভ্যন্তরীণ ফোম লাইনার আঘাতের শক্তি শোষণ করার জন্য ক্রাশ করে, আপনার মাথা রক্ষা করে। এই ক্ষতি প্রায়শই বাইরে থেকে দেখা যায় না; বাইরের খোলটি পুরোপুরি ঠিক দেখাতে পারে। তবে, একবার সেই ফোম সংকুচিত হয়ে গেলে, এটি কার্যকরভাবে অন্য আঘাত শোষণ করার ক্ষমতা থাকে না। তাই যেকোনো দুর্ঘটনা বা আঘাতের পর আপনার হেলমেট অবশ্যই বদলাতে হবে, এমনকি আপনি যদি মাটিতে জোরে পড়ে যান।

৯। সেকেন্ড-হ্যান্ড হেলমেটের বিপদ

ব্যবহৃত হেলমেট কখনই কিনবেন না। কারণ এই ধরণের হেলমেট দুর্ঘটনায় পড়ে থাকতে পারে, পড়ে যেতে পারে, অথবা প্রতিস্থাপনের তারিখ অনেক আগেই শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই একটি পুরানো বা পূর্বে ক্ষতিগ্রস্ত হেলমেট নিরাপত্তার জন্য মারাত্বক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

 

উপরোক্ত বিষয় সমূহ বিবেচনা করে আপনি আপনার জন্য নিরাপদ ও মান সম্পন্ন হেলমেট কিনতে পারবেন। হেলমেট কেনার ক্ষেত্রে অর্থ সাশ্রয়ের কথা চিন্তা করবেন না; কারণ এটি আপনার জীবন নিরাপত্তার জন্য কার্যকর উপকরণ।

এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: June 23, 2025
Reviews (0) Write a Review