মোবাইল ফোন চার্জার কেনাকাটা
মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য ডিভাইস হচ্ছে মোবাইল চার্জার। মোবাইলফোন দ্রুত চার্জ করার জন্য সঠিক চার্জার বাছাই করা উত্তম, যা গতিশীল চার্জিং, স্থায়িত্ব এবং সুরক্ষা সুবিধা প্রদান করে।
স্ট্যান্ডার্ড বনাম ফাস্ট চার্জার
- স্ট্যান্ডার্ড চার্জারঃ স্ট্যান্ডার্ড মোবাইল চার্জার সাধারণত ৫ভোল্ট/১ অ্যাম্পেয়ার এর নিয়মিত চার্জিং স্পীড প্রদান করে। এই ধরণের চার্জার সাধারণত ধীর গতির হয়ে থাকে, তবে এগুলো এখনও বাটন ফোন এবং পুরাতন স্মারটফোনের সাথে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, স্ট্যান্ডার্ড চার্জারের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়ে থাকে।
- ফাস্ট চার্জারঃ ফাস্ট চার্জারগুলি স্মার্টফোন দ্রুত চার্জ করার সুবিধা প্রদান করে। এগুলো একটু বেশি দামি এবং সাধারণত বাংলাদেশে ফাস্ট চার্জারের দাম ৬০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। তবে, চার্জার কেনার সময় চার্জারের ওয়াট ডিভাইসের ওয়াটের সাথে মিলে গেলে আপনি সর্বোচ্চ চার্জিং গতি পাবেন।
ওয়্যারড বনাম ওয়্যারলেস চার্জার
- ওয়্যারড চার্জারঃ বিচ্ছিন্নযোগ্য কেবল সহ একটি চার্জার কেনার চেষ্টা করুন যাতে প্রয়োজনে এটি পরিবর্তন করা যায় এবং অর্থ সাশ্রয় হয়। তবে, নিশ্চিত করুন যে চার্জার কেবলটি আপনার ডিভাইসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
- ওয়্যারলেস চার্জারঃ ওয়্যারলেস চার্জার হচ্ছে অত্যাধুনিক টেকনোলোজি দিয়ে তৈরি চার্জার যার মাধ্যমে ক্যাবল প্লাগ ইন না করে মোবাইল ফোন চার্জ করা যায়। শুধুমাত্র ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড যুক্ত প্যাডের উপর মোবাইল বসিয়ে দিয়ে চার্জ করা যায়। এই ধরণের চার্জার কিউআই ওয়্যারলেস চার্জিং টেকনোলোজি ব্যবহার করে এবং তারযুক্ত চার্জারের তুলনায় চার্জিং স্পীড কিছুটা স্লো হয়ে থাকে।
ব্র্যান্ডের সামঞ্জস্যতা
অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোন আলাদা চার্জিং প্রযুক্তি এবং পোর্ট ব্যবহার করে, তাই নিশ্চিত করুন যে চার্জারটি আপনার ব্র্যান্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে, যেকোনো টাইপ-সি সামঞ্জস্যপূর্ণ চার্জার আইফোন ১৫ এবং তার পরবর্তী মডেল থেকে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাজেট
বাংলাদেশে মোবাইল চার্জারের দাম ২০০ টাকা থেকে ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত, যা মানের এবং ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করে। মাল্টিপল পোর্ট মোবাইল চার্জারের দাম একটু বেশি এবং কমপক্ষে ১,০০০ টাকা। এছাড়াও, এমন কিছু ট্রাভেল চার্জার রয়েছে যা বিস্তৃত ভোল্টেজের মধ্যে কাজ করে। এগুলি সবই সামঞ্জস্যপূর্ণ চার্জার তবে এগুলি খুব ভালো এবং ভালো পারফরম্যান্স দেয়।
বিবেচনা করার মতো আরও কিছু বিষয়
- ব্র্যান্ড এবং গুণমানঃ চার্জার কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার ব্যবহৃত মোবাইল ব্র্যান্ডের সাথে সামঞ্জস্য ব্র্যান্ডের মোবাইল চার্জার বেছে নিবেন। সস্তা, নিম্নমানের চার্জার মোবাইলের ব্যাটারির ক্ষতি করতে পারে বা অতিরিক্ত গরম হতে পারে।
- নিরাপত্তা ফিচারঃ চার্জার এবং আপনার ফোন উভয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ভাল মানের চার্জার বিবেচনা করবেন। বিশেষ করে চার্জারে বিল্ট-ইন ওভারকারেন্ট সুরক্ষা, অতিরিক্ত গরম সুরক্ষা এবং শর্ট-সার্কিট সুরক্ষা রয়েছে কিনা যাচাই করবেন। সর্বদা সুরক্ষা মান মেনে চলা ব্র্যান্ডের চার্জার কিনবেন।
- সামঞ্জস্যতাঃ চার্জার কেনার করার আগে, অবশ্যই চার্জারটি আপনার ফোনের চার্জিং পোর্ট মাইক্রো-ইউএসবি, ইউএসবি-সি, অথবা লাইটনিং ক্যাবলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা যাচাই করবেন। কিছু চার্জার সর্বজনীন ভাবে ব্যবহার করা যায়, তাই একই সাথে বিভিন্ন ডিভাইস চার্জ করা যায়।
- ক্যাবল এর গুণমান এবং ধরণঃ চার্জারের অ্যাডাপ্টারের মতোই চার্জিং ক্যাবলও গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নমানের ক্যাবল চার্জিং স্পীড ব্যাহত করতে পারে এবং এমনকি আপনার ডিভাইসের ক্ষতি করতে পারে। তাই, ক্যাবলটি আপনার চার্জারের চার্জিং স্পীড সাপোর্ট করবে কিনা তা যাচাই করবেন। এছাড়াও, ক্যাবলের স্থায়িত্ব, দৈর্ঘ্য এবং উপাদান যাচাই করে নিবেন যেন দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার উপযোগী হয়।
- পোর্টের সংখ্যাঃ আপনার যদি একাধিক ডিভাইস যেমন, ফোন, ট্যাবলেট, স্মার্টওয়াচ, হেডফোন ইত্যাদি চার্জ করার প্রয়োজন হয় তাহলে একাধিক ইউএসবি পোর্ট সহ চার্জার বিবেচনা করবেন। এটি আপনাকে একাধিক অ্যাডাপ্টার কেনার প্রয়োজনীয়তা দূর করবে এবং আপনার খরচ সাশ্রয় হবে।
স্মার্টফোনের জন্য গ্যালিয়াম নাইট্রাইড প্রযুক্তি বিবেচনা করবেন
যারা সর্বশেষ চার্জিং টেকনোলোজি যুক্ত চার্জার খুঁজছেন, তাদের জন্য গ্যালিয়াম নাইট্রাইড টেকনোলোজি যুক্ত চার্জার উত্তম। এই টেকনোলোজির চার্জার সাধারণত সিলিকন-ভিত্তিক চার্জারগুলোর তুলনায় ছোট, হালকা এবং বেশি শক্তি-সাশ্রয়ী হয়। এছাড়া, কম্প্যাক্ট ফর্ম ফ্যাক্টরে উচ্চ-পাওয়ার আউটপুটের প্রদানের জন্য আদর্শ হয়ে থাকে। এই প্রযুক্তির চার্জারটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সর্বশেষ মডেলের আইফোন, শাওমি মোবাইল, স্যামসাং মোবাইল, গুগল পিক্সেল, ওয়ান প্লাস এবং অপ্পো মোবাইলের সাথে ব্যবহৃত হয়। তবে, এই প্রযুক্তির মোবাইল চার্জারের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি এবং এর দাম ১১,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
নকল চার্জার চেনার টিপস
বাংলাদেশে অরিজিনাল মোবাইল চার্জারের পাশাপাশি প্রচুর নকল মোবাইল চার্জার রয়েছে, যা থেকে আসল চার্জার বিবেচনা করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে আপনি নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ জানলে সহজে নকল চার্জার সনাক্ত করতে পারবেন-
১। ব্র্যান্ডের মোবাইল চার্জার দামে তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে, কারণ আসল চার্জারগুলোর নির্দিষ্ট উৎপাদন খরচ রয়েছে।
২। চার্জারের গায়ে অবশ্যই নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের লোগো থাকে। বিশেষ করে আইফোনের চার্জারের গায়ে ডিজাইনড বায় অ্যাপল ইন ক্যালিফোর্নিয়া লেখা না থাকে, শাওমি মোবাইলের চার্জার এর ক্যাবল যদি ১২০ সেন্টিমিটার এর কম এবং অ্যাডাপ্টার বড় হয় সেক্ষেত্রে সেটি নকল। তাই, কেনার সময় ব্র্যান্ডের লোগো বা চার্জারে প্রিন্টেড লেখা ভালো ভাবে যাচাই করে নিবেন।
৩। চার্জার দিয়ে যদি মোবাইল চার্জ হতে অনেক বেশি সময় নেয় তাহলে বুঝে নিবেন চার্জারটি নকল।
৪। এছাড়া, একবার চার্জে যদি মোবাইল চার্জার গরম হয় তাহলে সাথে সাথে চার্জার খুলে ফেলবেন। কারণ মোবাইল চার্জারটি নকল এবং যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। নকলে চার্জার দিয়ে দিনে দুই তিন বার মোবাইল চার্জ করলে প্রচুর গরম হয়ে যায়।
৫। অ্যাপ্টারের সাথে ক্যাবল পোর্ট যদি খাপ না খায়, এবং পোর্টের পিন ছোট বড় থাকে তাহলে সেই চার্জারটি নকল।
৬। ড্যাশ চার্জিং টেকনোলোজিতে তৈরি চার্জার দিয়ে মোবাইল চার্জ করার সময় মোবাইলে ফ্ল্যাশ চিহ্ন দেখা যায়। আর যদি না দেখা যায় তাহলে সেটি নকল চার্জার।