ছাতা কেনাকাটা
বাংলাদেশ বৃষ্টির দেশ তাই বেশিরভাগ মাসেই বৃষ্টি হয়। কখনো কখনো বজ্রসহ বৃষ্টি হয়। কোনো কোনো মাসকে বর্ষাকাল বলা হয় তখন অবিরাম বর্ষণ প্রায় এলাকার রাস্তা, মাঠ ও বাড়িঘরকে প্লাবিত করে। সেসময় ছাতা স্কুল, উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য প্রত্যেকের অন্যতম প্রধান সঙ্গী। ছাতার দাম সবার জন্য বেশ সাশ্রয়ী এবং নিচের টিপসগুলো অনুসরণ করলে বাংলাদেশে অনলাইনে ভালো মানের ছাতা পাওয়া যাবে।
কী বিবেচনা করবেন?
- সাইজঃ ছাতার আকার যথেষ্ট হওয়া উচিত যাতে এটি একজন ব্যক্তিকে পুরোপুরি আচ্ছাদিত করে। দৈর্ঘ্য অবশ্যই আদর্শ হতে হবে যাতে ছাতাটি আপনার ব্যাকপ্যাকে ফিট হয় বা বহন করা সহজ। সাধারণত ছাতা ১০-১১ ইঞ্চি লম্বা হয়। মনে রাখবেন খুব বড় সাইজের ছাতা বহন করা সুবিধাজনক নাও হতে পারে। কিছু ছাতা ভাঁজ করা যায় এবং কিছু ছাতা ভাঁজ করা যায় না।
- ফ্রেমঃ ফ্রেম খুব গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর ছাতার কোয়ালিটি নির্ণয় করার জন্য। প্রবল বাতাসের সময় ফ্রেমটি ছাতাটিকে ভেঙ্গে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। সুতরাং, ফ্রেমের দৃঢ়তা দেখুন। কিছু ছাতার ডবল ফ্রেম থাকে এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়।
- ফ্যাব্রিকঃ ছাতার ফ্যাব্রিক হালকা এবং টেকসই হওয়া উচিত। এটি কেবল বৃষ্টি থেকে নয়, রোদ থেকেও রক্ষা করা উচিত।
- রংঃ কালো রঙ সবসময় বৃষ্টি বা সূর্যালোক যে কোন অবস্থায় কাজ করে। যাইহোক, যে কেউ তার পছন্দের রং নির্বাচন করা উচিত।
- ব্যবহারকারীর বয়সঃ ব্যবহারকারীদের বয়স বিবেচনা করুন। যদি এটি বাচ্চাদের জন্য হয় তবে আকারে ছোট এমন ছাতা কিনুন। যদি এটি বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য হয় তবে ভাঁজ ছাড়া সাধারণ ছাতা অনেক ভালো কাজ করে কারণ এই কাজটি তাদের জন্য করা কঠিন হতে পারে।
বাংলাদেশে ছাতার দাম
বাংলাদেশে উৎপাদিত বেশিরভাগ ছাতা এবং এর গুণগত মান অসাধারণ। তাই ছাতার দাম খুবই কম। বাংলাদেশে ৩৫০ টাকায় একটি ছাতা পেতে পারেন। ভাল মানের ফোল্ডিং ছাতার দাম ৫০০ টাকা থেকে শুরু এবং ফ্যাশনেবল ছাতার দাম একটু বেশি।
ম্যানুয়াল বনাম অটোমেটিক মেকানিজম
রোদ এবং বৃষ্টিতে ছাতা ঢাল হিসেবে কাজ করে। তবে, ছাতা দুই ভাবে অপারেট করতে হয় যেমন ম্যানুয়াল এবং অটোমেটিক মেকানিজম। দুটি মেকানিজমের আলাদা আলাদা সুবিধা রয়েছে।
- ম্যানুয়াল মেকানিজমঃ ম্যানুয়াল মেকানিজমের ছাতা মূলত পুরোনো ধাচের ছাতা, যা ক্যানোপি খুলতে এবং বন্ধ করতে শাফটের উপরে রানার স্লাইড করতে হয়। তবে, ছাতা খোলা এবং বন্ধ করার প্রক্রিয়ার উপর ব্যবহারকারীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। ফলে, অতিরিক্ত বাতাসে ছাতা উলটে যাওয়ার ঝুকি থাকে না। তাছাড়া, সরল ডিজাইন, ওজনে হালকা এবং ভাজ করা সুবিধাজনক হওয়ায়, সহজে বহন করা যায়। ম্যানুয়াল মেকানিজমের ছাতার দাম কম হয়ে থাকে।
- অটো মেকানিজমঃ অটোমেটিক মেকানিজম যুক্ত ছাতা মূলত স্প্রিং লোডেড প্রক্রিয়ায় কাজ করে। ফলে, বাটন প্রেস করে ছাতা বন্ধ এবং চালু করতে হয়। এই মেকানিজমের বড় সুবিধা হচ্ছে হঠাৎ বৃষ্টি বা বাজারের ব্যাগ নিয়ে চলাচল করার ক্ষেত্রে এক হাতে দ্রুত খোলা এবং বন্ধ করা যায়। এই মেকানিজমের ছাতা মসৃণ ও আধুনিক ডিজাইনে তৈরি হওয়ায় ওজনে কিছুটা ভারী এবং দামও কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। তবে, গতি, সুবিধা এবং এক হাতে পরিচালনা করা সহজ হওয়ায় শহুরে এরিয়াতে অটোমেটিক ছাতার চাহিদা বেশি। বাংলাদেশে অটো মেকানিজম সহ ছাতার দাম ৪৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে, যা দুই-ভাঁজ বা তিন-ভাঁজ উপর নির্ভর করে দাম পরিবর্তিত হয়। থ্রি-ফোল্ড ছাতাকে সাধারণত ক্যাপসুল ছাতা বলা হয়, যা বহন করা বেশি সুবিধাজনক হয়ে থাকে।
হ্যান্ডেল গ্রিপ - স্ট্রেইট বনাম কার্ভড
- স্ট্রেইট হ্যান্ডেল গ্রিপঃ এই ধরণের হ্যান্ডেল গ্রিপ ক্লাসিক, সরল ডিজাইনে তৈরি হওয়ায় মানানসই গ্রিপ প্রদান করে। ফলে, দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট সহজ হয়ে থাকে। তাছাড়া, এই হ্যান্ডেলের ছাতা যথেষ্ট স্থিতিশীল এবং আরামদায়ক হয়ে থাকে।
- কার্ভড হ্যান্ডেল গ্রিপঃ আমাদের দেশে জে এবং সি এর ন্যায় কার্ভড হ্যান্ডেলের ছাতা সচারাচর পাওয়া যায়। জে-আকৃতির হ্যান্ডেল মূলত একট হুকের মতো বা বক্ররেখাকৃতির মত দেখা যায়। এটি ব্যাগ বা হাতের কব্জিতে ঝুলিয়ে সহজেই যাতায়াত করা যায়। সি-আকৃতির হ্যান্ডেল গ্রিপ হাতে ধরার জন্য বেশি জায়গা প্রদান করে, যার ফলে দীর্ঘ সময় বহন বা অতিরিক্ত স্টাইলের জন্য উত্তম।
উইন্ডপ্রুফ ছাতার সুবিধা
- এই ধরণের ছাতা তীব্র ঝোড়ো হাওয়া সহ্য করতে পারে, সহজে উল্টে যায় না বা ভেঙে যায় না।
- বাতাস উঠলেও উইন্ডপ্রুফ ছাতা নিজস্ব আকৃতি এবং আবরণ বজায় রেখে বৃষ্টি বা রোদ থেকে নির্ভরযোগ্যভাবে সুরক্ষা প্রদান করে।
- তাছাড়া, উইন্ডপ্রুফ ছাতা ফাইবারগ্লাস, শক্ত ইস্পাত বা উচ্চ-গ্রেড অ্যালুমিনিয়ামের মতো উপকরণ দিয়ে তৈরি হওয়ায় ঝড়ো বাতাসের চাপে বেঁকে বা ভেঙ্গে যাইয় না।
- অনেক বাতাস-প্রতিরোধী ছাতা ভেন্ট সহ ডবল ক্যানোপি দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। এই ভেন্টগুলো পালের মতো বাতাসকে ধরার পরিবর্তে ছাতার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে দেয়। ফলে ছাতার উপর চাপ কমিয়ে উলটে যাওয়া রোধ করে, ফলে ছাতা ধরে রাখা সহজ হয়।
- বাংলাদেশে বাতাসরোধী ছাতার দাম সাধারণত ৬০০-৭০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
ছাতা রক্ষণাবেক্ষণ টিপস
- ছাতা ব্যবহারের পর তোলে রাখার ক্ষেত্রে সবসময় সম্পূর্ণ শুকিয়ে নিবেন যাতে ছাতার ভেতরে কোনো ছত্রাক জন্মাতে না পারে।
- ছাতার উপর যদি ময়লা থাকে তাহলে তা ভেজা কাপড় দিয়ে ছাউনিটি মুছে নিবেন এবং প্রয়োজন হলে কাপড়টি হালকা ভাবে ধুয়ে ফেলবেন।
- ছাতার খোলার প্রক্রিয়াটি মসৃণ রাখতে এবং মরিচা পড়া রোধ করতে অল্প পরিমাণে সিলিকন স্প্রে বা তেল দিয়ে রাখতে পারেন।
- ব্যবহার করার প্রয়োজন না হলে ছাতাটি শীতল, শুষ্ক জায়গায় রেখে দিবেন।
- এছাড়া, ছাতার হ্যান্ডেল, ফ্রেম এবং ছাউনির কাপড় ইত্যাদি কোনো সমস্যা থাকলে প্রয়োজনে মেরামত করিয়ে নিবেন। তাহলে ছাতা দীর্ঘদিন নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন।