bdstall.com

মশা তাড়ানোর ১০ টি উপায়

প্রচন্ড গরমে মশা যেন এক বিরক্তিকর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি শুধু রাতের শান্তি নষ্ট করে না, মশার কামড়ে বিভিন্ন রোগেরও আশঙ্কা রয়েছে। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া—এমন অনেক ভয়ঙ্কর রোগের জীবাণু মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই কারণে, মশা তাড়ানোর কার্যকর উপায়গুলো জানা এবং প্রয়োগ করা জরুরি। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের মশা নিধনকারী ডিভাইস রয়েছে, তবে প্রাকৃতিকভাবে মশা তাড়ানোর অন্যান্য কার্যকর উপায় জানা গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে চলুন মশা তাড়ানোর পাশাপাশি আপনাকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করবে এমন ১০ টি কার্যকর উপায় সম্পর্কে জেনে নেয়।

 

১। মশা মারার ব্যাট

মশা তাড়ানো বা মারার জন্য খুবই জনপ্রিয় এবং কার্যকর উপায় হচ্ছে মশা মারার ব্যাট ব্যবহার করা। এটি মূলত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যা মশা বা অন্যান্য ছোট কীটপতঙ্গকে শক দেয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে মেরে ফেলে। ওজনে হালকা এবং কম্প্যাক্ট সাইজের হওয়ায় খুব সহজে হাতে নিয়ে মশা মারা যায়। মশা মারার ব্যাট দ্রুত এবং কার্যকর হলেও, বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত।

 

২। মশার প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে নেট

মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার আরেকটি নিরাপদ উপায় হলো মশার নেট ব্যবহার করা। ঘরের জানালা, দরজায় মশার নেট এবং বিছানার চারপাশে মশারি টানিয়ে রাখলে মশা প্রবেশ করতে পারে না। এটি বিশেষ করে রাতে ব্যবহার করা ভালো, যখন মশা বেশি সক্রিয় থাকে।

 

৩। ফগিং মেশিন

মশা তাড়ানোর আরেকটি শক্তিশালী এবং কার্যকর উপায় হচ্ছে মস্কুইটো ফগিং মেশিন ব্যবহার। এই মেশিনটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে মশাদের দূরে রাখা যায়। এটি মূলত একধরনের স্প্রে মেশিন যা বাতাসে মশা ধ্বংসকারী রাসায়নিক পদার্থ ছিটিয়ে দেয়। এটি খোলা মাঠ, বাগান, ফ্যাক্টরি এর মত বড় জায়গা বা উন্মুক্ত স্থানে ব্যবহার করা হয় যেখানে মশার প্রজনন এবং বসবাস করে। যখন ফগিং মেশিনের স্প্রে করা হয় তখন সরাসরি শ্বাস- প্রশ্বাস নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন এবং প্রয়োজনে মুখে মাস্ক পরবেন। তাছাড়া, বৃদ্ধি ও শিশুদের এসব রাসায়নিক থেকে দূরে রাখবেন।

 

৪। ইউভিএ টিউব বা লাইট

মশা তাড়ানোর আরেকটি পদ্ধতি হলো ইউভিএ টিউব। মশারা বিশেষ করে উজ্জ্বল আলো এবং অতিবেগুনী রশ্মির দিকে আকৃষ্ট হয়। এটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা থেকে ইউভিএইউভিএ রশ্মি নিঃসরণ হয় এবং মশাদের আকর্ষণ করে। পরবর্তীতে এটি মশা মারতে সহায়তা করে। এটি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করা যায়। এটি যথেষ্ট নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব। তবে, অতিবেগুনী রশ্মি ত্বকে এবং চোখের ক্ষতি করতে পারে। তাই ইউভিএ টিউব ব্যবহার করার সময় সরাসরি আলোতে বেশি সময় না থাকার চেষ্টা করবেন।

 

৫। প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার

মশা থেকে নিরাপদ থাকতে খুব সহজ এবং প্রাকৃতিক উপায় হচ্ছে গায়ে তেল ব্যবহার করা। বিভিন্ন প্রাকৃতিক তেল যেমন ইউক্যালিপটাস, ল্যাভেন্ডার, এবং নিমের তেল মশাদের জন্য প্রাকৃতিক প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। সরাসরি এই ধরণের তেল ব্যবহার না করাই উত্তম, কারণ সরাসরি ব্যবহার করলে ত্বকের জ্বালা-পোড়া বা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই নারিকেল তেলের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে শরীরে মাখলে মশা কাছে আসে না এবং মশার কামড় থেকে বাঁচা যায়।

 

৬। ঘর পরিষ্কার রাখা

যেখানে আবর্জনা জমে থাকে, সেখানে মশা সহজে বাসা বাঁধে। তাই, ঘর বা অফিস পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাড়ির আশেপাশে পরিত্যক্ত স্থান, ঝুপড়ি এবং পরিত্যাক্ত পাত্রে পানি জমে থাকলে সেখানে মশা ডিম পাড়ে। এসব জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার করবেন তাহলে মশা বংশবিস্তার করতে পারবে না।

 

৭। বাতাস চলাচল বজায় রাখা

মশারা স্থির অবস্থায় থাকতে পছন্দ করে। রুমে ফ্যান চালু রাখলে মশা ঠিকভাবে উড়তে পারে না এবং আপনার আশপাশে অবস্থান করতে পারবে না। তাই ঘরে বা অফিসে ফ্যান চালু রেখে মশা তাড়াতে পারেন।

 

৮। লেবু এবং লবঙ্গ

লেবু এবং লবঙ্গ মশা তাড়ানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকরী প্রাকৃতিক উপাদান। লেবুর খোসায় কিছু লবঙ্গ গেঁথে রেখে ঘরের বিভিন্ন কোণে রাখলে মশা আসে না। এটি একটি প্রাকৃতিক উপায় এবং এতে কোনো রাসায়নিক উপাদানও নেই, তাই ঘরোয়া পদ্ধতিতে সকলের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ।

 

৯। মশা তাড়ানোর স্প্রে

আমাদের দেশের বাজারে কয়েল, ক্রিম এর পাশাপাশি অ্যারোসল সহ বিভিন্ন ধরনের মশা তাড়ানোর স্প্রে পাওয়া যায়, যা মশাদের দ্রুত তাড়াতে সহায়তা করে। বিশেষ করে ডিইইটি, পিকারিডিন এর মত রাসায়নিক উপাদানে তৈরি স্প্রে পাওয়া যায়, যা মশা-মাছি তাড়ানোর জন্য কার্যকর হয়ে থাকে। নির্দেশিকা অনুযায়ী ব্যবহার করলে উভয় উপাদানই সাধারণত নিরাপদ হয়ে থাকে। তবে, অতিরিক্ত পরিমাণে বা ভুলভাবে ব্যবহার করা হয় তাহলে ডিইইটি এর ক্ষেত্রে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

 

১০। নারিকেলের আঁশ পোড়ানো

মশা তাড়ানোর সবশেষ সাশ্রয়ী এবং কার্যকর সমাধান হচ্ছে নারিকেলের গায়ে থাকা আঁশ পোড়ানো। প্রথমে নারিকেলের গায়ে থাকে আঁশ শুকিয়ে টুকরা টুকরা করে নিতে হবে। তারপর একটি পাত্রে রেখে জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠি দিয়ে আগুন ধরাতে হবে। পরবর্তী ৫-৬ মিনিটের মধ্যেই দেখবেন মশা দূর হয়ে গেছে। তবে, নারকেলের আঁশ পোড়ানের ফলে সৃষ্ট আগুন এবং ধোঁয়া থেকে শ্বাসকষ্ট এর মত ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।

 

সবশেষে বলা যায়, মশা তাড়ানোর উপর বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি সহজেই মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে পারেন। উপরোক্ত ১০টি উপায় আপনার প্রতিদিনের জীবনে সহজেই প্রয়োগ করা সম্ভব, এবং এগুলো থেকে আপনি উপকারিতাও পাবেন। তবে মনে রাখবেন, যেকোনো মশা তাড়ানোর উপায় অনুসরণ করার আগে আপনার স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন এবং রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার যতটা সম্ভব কমিয়ে আনবেন। তাহলে, আপনি নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন, আর পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হবে না।

এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: June 18, 2025
Reviews (0) Write a Review