bdstall.com

ল্যাপটপের যত্ন কিভাবে নিবেন?

তরুন প্রজন্মের কাছে ল্যাপটপ খুবই জনপ্রিয় একটি কম্পিউটিং ডিভাইস । প্রযুক্তির উৎকর্ষায় ল্যাপটপ এখন প্রতিটি ঘরে ঘরেই দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে অফিস আদালতের গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিজিট করার জন্যও ল্যাপটপ ব্যবহার হচ্ছে। তবে ল্যাপটপের এত সহজলভ্যতার কারণে অনেকেই এটির যত্নের কথা ভুলে যায় কিন্তু আপনার ল্যাপটপটিকে দীর্ঘদিন ভালো রাখার জন্য অবশ্যই এটির সঠিক যত্নের প্রয়োজন রয়েছে।

 

১। ল্যাপটপের বাইরের অংশ পরিষ্কার

  • নিয়মিত ব্যবহারে ল্যাপটপে ধুলোবালি, দাগ এমনকি আঙুলের ছাপ পড়ে যায়, যা নোংরা দেখায়। তাই নরম লিন্ট-ফ্রি কাপড় বা মাইক্রোফাইবার কাপড় ব্যবহার করে ল্যাপটপের বাইরের অংশ পরিষ্কার করতে হবে।
  • কীবোর্ড, পোর্ট এবং অন্যান্য সেন্সেটিভ জায়গা পরিষ্কার করতে ভ্যাকুউম ক্লিনার ব্যবহার করা উচিত, যা বাতাস ব্যবহার করে ল্যাপটপে জমা হওয়া ধ্বংসাবশেষ দূর করে।
  • তবে, ল্যাপটপ পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে রাসায়নিক বা ক্লিনিং এজেন্ট ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ এই ধরণের ক্যামিকেল ল্যাপটপের ফিনিস নষ্ট করতে পারে।

২। সঠিক ল্যাপটপ প্রটেক্টর

  • ল্যাপটপে যেন সহজে স্ক্র্যাচ না পড়ে কিংবা ছোটখাটো আঘাতে কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতি না হয় তার জন্য গুণমান সম্পন্ন ল্যাপটপ প্রটেক্টর ব্যবহার করতে হবে।
  • অফিসের কাজে, বাইরের মিটিং এবং ভ্রমণের সময় ল্যাপটপ ক্যারি করার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত প্যাডিং এবং কুশনিং ব্যবস্থা যুক্ত ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে, যা সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে আপনার ল্যাপটপকে নিরাপদ রাখতে সহায়ক হবে।

৩। ল্যাপটপ ডিসপ্লে এর নিরাপত্তা

  • ল্যাপটপের উপর সরাসরি ভারী কোন কিছু রাখবেন না কারণ ল্যাপটপের উপরের অংশটি ফাপা এবং সরু কাচ তন্তুর তৈরি ডিসপ্লে থাকে তাই হালকা পেশারে এটি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে আর জেনে রাখা ভালো ল্যাপটপের ডিসপ্লে পরিবর্তন করা কিন্তু তুলনামূলক ব্যয়বহুল একটি ব্যাপার।
  • ল্যাপটপ বন্ধ করার সময় শুধুমাত্র ডিসপ্লে এর উপর চাপ দিয়ে ঢাকনা বন্ধ না করে, ঢাকনার উভয় পাশে ধরে বন্ধ করতে হবে, ফলে ল্যাপটপের ডিসপ্লের উপর কোনো প্রকার চাপ পড়বে না।

৪। ল্যাপটপে সঠিকভাবে বাতাস চলাচল

  • ল্যাপটপের বাতাস চালচল যাতে ঠিক থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখুন। কারণ আমরা জানি ল্যাপটপ চলার সময় প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় তাই ল্যাপটপটি যেখানে ব্যবহার করবেন সেখানে যাতে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে সেই দিকে খেয়াল রাখবেন।
  • এছাড়াও ল্যাপটপের বাতাস চলাচলের পোর্ট এবং ফ্যানের আশেপাশে ধুলো, ফ্যাব্রিক বা অন্যান্য উপকরণ দ্বারা বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • ল্যাপটপ সাধারণত শক্ত এবং সমতল কোন স্থানে ব্যবহার করতে হবে, যাতে বাতাস সঠিকভাবে চলাচল করতে পারে। হাই-প্রসেসের কাজ করার ক্ষেত্রে ল্যাপটপ শীতল রাখার জন্য প্রয়োজন কুলিং কিংবা স্ট্যান্ড ব্যবহার করা উচিত।

৫। সঠিক ও নির্ভরযোগ্য এন্টিভাইরাস ব্যবহার

  • অবশ্যই ভালোমানের একটি এন্টিভাইরাস ব্যবহার করবেন কারণ অধিকাংশ সময়ই ল্যাপটপ ম্যালওয়্যার, ভাইরাস এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাঝমাঝে আপনার ল্যাপটপের সকল ডাটা পর্যন্ত চুরি যাওয়া বা হারাতে পারে শুধু ভাইরাস, ম্যালুওয়্যারের কারণে।
  • এছাড়াও, প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভাইরাস অ্যাটাক থেকে ল্যাপটপ নিরাপদ রাখতে নিয়মিত এন্টিভাইরাস আপডেট করতে হবে।

৬। নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট

  • ল্যাপটপ এর অপারেটিং সিস্টেম, ড্রাইভার এবং সফ্টওয়্যার সমূহ সাম্প্রতিক বাগ সংশোধন, নিরাপত্তা প্যাচ এবং উন্নত কর্মক্ষমতা পাওয়ার জন্য অফিসিয়াল আপডেট চালু রাখতে হবে। 

৭। প্রসেসর লোড ব্যালেন্স

  • ল্যাপটপ ব্যবহারে প্রসেসরের উপর চাপ কম দেওয়ার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যারগুলো সবসময় বন্ধ রাখার চেষ্টা করুন।
  • ল্যাপটপে অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইনিস্টল করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাছাড়া, ল্যাপটপে কাজ করার সময় ব্রাউজারে অনেক উইন্ডো ওপেন থাকে। কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজন না হলে অপ্রয়োজনীয় উইন্ডো মিনিমাইজ করে রাখুন।

৮। ব্যাটারি

  • ল্যাপটপের ব্যাটারি সংযোগের স্থানটি ময়লা জমে শর্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই মাঝে মাঝে ব্যাটারির সংযোগ স্থানটি পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • এছাড়াও ল্যাপটপের ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে যতটুকু সম্ভব কম ব্রাইটনেসে ল্যাপটপ ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও, অতিরিক্ত ব্রাইটনেস প্রয়োজন হলে অবশ্যই সরাসরি চার্জারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ব্যবহার করলে ব্যাটারির উপর চাপ কম পড়ে।

৯। নিরাপদ চার্জিং

  • ল্যাপটপ চার্জ করার ক্ষেত্রে সবসময় ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানির চার্জার এবং পাওয়ার অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করতে হবে।
    ফলে, সঠিক ভোল্টেজে ল্যাপটপ চার্জ হবে এবং, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকবে।
  • এছাড়াও, ল্যাপটপ চার্জ করার সময় হাই-প্রসেসের কাজ না করাই উত্তম। কারণ হাই-প্রসেসের কাজে যে অতিরিক্ত তাপমাত্রা উৎপন্ন হবে তা ল্যাপটপ এর ব্যাটারির কর্মক্ষমতা প্রভাবিত করতে পারে।

১০। পাওয়ার সার্জেস প্রটেকশন

  • বাসা, অফিস এ যদি বৈদ্যুতিক পাওয়ার ওঠানামা করে সেক্ষেত্রে আপনার ল্যাপটপকে নিরাপদ রাখতে সার্জ প্রোটেক্টর ব্যবহার করতে হবে।
  • বিশেষ করে বর্ষাকালে আমাদের দেশে বজ্রপাত বেশি হয়ে থাকে। তাই নির্দিষ্ট সময় ব্যবহারের পর আপনার ল্যাপটপটি আনপ্লাগ রাখতে হবে।

১১। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ

  • স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা বা সরাসরি সূর্যের আলো পরে এমন কোন স্থানে রেখে ল্যাপটপ চালাবেন না এতে অতিরিক্ত তাপে ল্যাপটপের ক্ষতি হতে পারে।

১২। ল্যাপটপ সার্ভিসিং

  • ল্যাপটপ বছরে অন্তত একবার কোন নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান থেকে একজন এক্সপার্ট দিয়ে সার্ভিসিং করানো উচিত। ফলে ল্যাপটপের ভিতরে অতিরিক্ত ধুলাবালি ছাড়াও আরো নানান গুরুত্বপূর্ণ অংশ রিচেক করে দিবে এবং প্রয়োজনে কোনো পার্টসে ত্রুটি থাকলে তা পরিবর্তন করে দিবে। ফলে ল্যাপটপটি দীর্ঘদিন ব্যবহারে নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে।

উপরোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করলে আপনি আপনার ল্যাপটপ নিশ্চিন্তে দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়াও, ল্যাপটপ এর দাম এবং ল্যাপটপ এর জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাক্সেসোরিস সম্পর্কিত তথ্য জানতে ভিজিট করুন বিডিস্টল.কম এর ওয়েবসাইটে। 

 

এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: November 01, 2023
Reviews (0) Write a Review