
জেনারেটর হল এক ধরণের মেশিন যা যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। ফলে যখন গ্রিডে বিদ্যুৎ থাকে না তখন এটি ব্যবহার করে পাওয়ার গ্রীডের ন্যায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যায়। বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বড় শিল্প কারখানা এবং কন্সট্রাকশন সাইটে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এগুলোর ধরণ এবং কীভাবে আসলে কাজ করে সে সম্পর্কে আমরা জানি না।
জেনারেটর কি?
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন নীতির উপর ভিত্তি করে মাইকেল ফ্যারাডে জেনারেটর আবিষ্কার করেছিলেন। জেনারেটরের ইঞ্জিন মূলত যান্ত্রিক শক্তি উৎপন্ন করে, যা পরে জেনারেটরের অল্টারনেটর দ্বারা বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এর মৌলিক কাজ হচ্ছে আপনার বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ইন্ডাস্ট্রিতে লাইট, ফ্যান সহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস সমূহে বিদ্যুৎ সরবারহ করা। লোডশেডিং প্রবণ এরিয়াতে ব্যাক আপ পাওয়ার হিসেবে জেনারেটর ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হয়।
জেনারেটরের ধরণ
আপনার কোথায় প্রয়োজন এবং আপনি কী কাজে ব্যবহার করবেন তার উপর নির্ভর করে, বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের জেনারেটর রয়েছে।। এছাড়া, পাওয়ার সোর্স, ফুয়েল টাইপ, রেটেড পাওয়ার, সাইজ, এফিশিয়েন্সি ইত্যাদি বিষয় অনুযায়ী জেনারেটরের ধরণ ভিন্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে যেসব জেনারেটর সাধারণত পাওয়া যায় -
- মিনি জেনারেটর
- ডিজেল জেনারেটর
- গ্যাস জেনারেটর
- সোলার জেনারেটর
- হাইব্রিড জেনারেটর
ধরণ অনুযায়ী জেনারেটর যেভাবে কাজ করে
১। মিনি জেনারেটরের কাজ

মিনি জেনারেটর মূলত ছোট অভ্যন্তরীণ ফুয়েল ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি। এটি জ্বালানি হিসেবে সাধারণত পেট্রোল ব্যবহার করে। এই ইঞ্জিনটি পেট্রোল ব্যবহার করে যান্ত্রিক শক্তি উৎপন্ন করে, যা পরে একটি অল্টারনেটর বা ডায়নামোর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তর হয়। পরবর্তীতে, উৎপন্ন বিদ্যুৎ লাইট, ফ্যান, সাউন্ড সিস্টেম সহ অন্যান্য ছোট ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসে ব্যবহার করা যায়। মিনি জেনারেটর সাধারণত কম্প্যাক্ট সাইজ এবং পোর্টেবল ডিজাইনে তৈরি হওয়ায়, ছোট অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এমনকি ক্যাম্পিং ও আউটডোর সমাবেশে ব্যবহার করার জন্য উত্তম হয়ে থাকে। আপনি বিডিস্টল থেকে মিনি জেনারেটর কিনতে পারেন।
২। ডিজেল জেনারেটরের কাজ

ডিজেল জেনারেটর অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনকে শক্তি প্রদানের জন্য ফুয়েল হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করে। এই ইঞ্জিনটি ডিজেল পুড়িয়ে তাপ এবং যান্ত্রিক শক্তি উৎপন্ন করে জেনারেটরের অল্টারনেটরে পাঠায়। অল্টারনেটরটি পরবর্তীতে এই যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে, যা বিভিন্ন ডিভাইসে বিদ্যুৎ সরবারহের জন্য ব্যবহার করা হয়। ডিজেল জেনারেটর মূলত দক্ষ, স্থায়ী এবং দীর্ঘ সময় ধরে নির্ভরযোগ্যভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সুপরিচিত। এই ধরণের জেনারেটর মূলত হেভি ডিউটি মেশিন হিসেবে আবাসিক ভবন, শিল্প কারখানা, হাসপাতাল সহ অন্যান্য বড় প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া, অন্যান্য জ্বালানীর তুলনায় ডিজেল সস্তা হওয়ায়, এই জেনারেটর দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য বেশ সাশ্রয়ী হয়ে থাকে। এছাড়া, বিডিস্টলে ডিজেল জেনারেটরের দাম ও বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন।
৩। গ্যাস জেনারেটরের কাজ

গ্যাসোলিন জেনারেটর অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনে জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস বা প্রোপেন ব্যবহার করে। এই দহন প্রক্রিয়া যান্ত্রিক শক্তি উৎপন্ন করে, পরে অল্টারনেটরকে শক্তি সরবারহ করে। অল্টারনেটর সেই যান্ত্রিক শক্তি গ্রহণ করে এবং এটিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে, বিভিন্ন ডিভাইসে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এই ধরণের জেনারেটর কম্প্যাক্ট সাইজ এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব ডিজাইনে তৈরি হওয়ায় স্বল্পমেয়াদী বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট কার্যকর। গ্যাস জেনারেটর পরিবেশ-সচেতন ব্যবহারকারীদের কাছে পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। তাছাড়া, আমাদের দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় ডিজেল এবং পেট্রোল জেনারেটরের তুলনায় গ্যাস জেনারেটর দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য সাশ্রয়ী হয়ে থাকে।
৪। সোলার জেনারেটরের কাজ

সোলার জেনারেটর আসলে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সূর্যালোককে বিদ্যুতে রূপান্তর করে। এই প্যানেল সূর্যের আলো শোষণ করে। পরবর্তীতে এটি ডিসি বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে একটি ব্যাটারিতে সংরক্ষিত রাখে। তারপরে, একটি ইনভার্টার সেই ডিসি বিদ্যুৎকে এসি বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে, যা আপনার বাসা-বাড়ির লাইট, ফ্যান এবং অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস চালানোর জন্য উপযুক্ত হয়ে থাকে। সোলার জেনারেটর কেবল পরিবেশ বান্ধব এবং টেকসই নয়, অফ-গ্রিড জীবনযাপনের জন্য বা ব্যাকআপ পাওয়ার সল্যুশন হিসাবেও অধিক জনপ্রিয়। এছাড়া, একবার ইনস্টল করার পরে, সোলার জেনারেটর অপারেট করার জন্য আলাদা কোনো খরচ নেই, কারণ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত সূর্যালোক বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
৫। হাইব্রিড জেনারেটরের কাজ

হাইব্রিড জেনারেটর মূলত দুই বা তার অধিক বিদ্যুৎ উৎসের সমন্বয়ে তৈরি। এটি ঐতিহ্যবাহী জ্বালানি ইঞ্জিন, যেমন ডিজেল বা পেট্রোল, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস যেমন সূর্যের আলো ব্যবহার করে। নবায়নযোগ্য শক্তি মূলত ব্যাটারি চার্জ করে, যখন পাওয়ার ব্যাক আপ প্রয়োজন হয় এটি তখনই বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। যখন ব্যাটারি চার্জ কমে যায় বা অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় তখন জ্বালানি ইঞ্জিন কাজ করে। এই ধরণের জেনারেটর কেবল দক্ষতা বৃদ্ধি করে না বরং জ্বালানি খরচ এবং নির্গমন কমায়। হাইব্রিড জেনারেটর ব্যাকআপ পাওয়ার এবং অফ-গ্রিড উভয় পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। এটি বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময় অবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ করতে পারে।
পরিশেষে, বলা যায় যে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটর অপরিহার্য হাতিয়ার। আপনি ক্যাম্পিংয়ের জন্য ছোট, পোর্টেবল ইউনিট খুঁজে থাকেন বা শিল্প কারখানার মত বড় প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য শক্তিশালী জেনারেটর খুঁজে থাকেন না কেন, প্রয়োজন অনুসারে বিডিস্টলে প্রায় সকল ধরণের জেনারেটর রয়েছে, যেখান থেকে আপনি বাংলাদেশে জেনারেটরের দাম এবং স্পেসিফিকেশন তুলনা করে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।