bdstall.com

কিভাবে আনঅফিসিয়াল ফোনকে অফিসিয়াল করবেন?

নতুন ফোন কেনার সময় আমরা সবাই সেরা ডিল খুঁজে থাকি। কিন্তু অনেক সময় কম দামে ফোন কিনতে গিয়ে আমরা আনঅফিসিয়াল ফোন কিনে ফেলি, যেগুলো বৈধ পথে আমদানি করা হয়নি। কিন্তু বর্তমানে সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার এবং বিটিআরসি এই ধরনের ফোনের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করছে। যেকোনো সময় আপনার শখের আনঅফিসিয়াল ফোন সেটটি নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। তাই, ফোন কেনার আগে বা পরে সেটি বৈধ কিনা তা যাচাই করা এবং প্রয়োজনে সেটিকে নিবন্ধিত করা অত্যন্ত জরুরি।

 

বাংলাদেশে মোবাইলের দামের তালিকা

 

তাহলে চলুন কিভাবে আপনি আপনার ফোনের বৈধতা যাচাই করবেন এবং কিভাবে একটি আনঅফিসিয়াল ফোন বিটিআরসি-এর ডাটাবেজে রেজিস্টার বা অফিসিয়াল করবেন সেসব বিষয় সম্পর্কে জেনে নেয়।

 

আনঅফিসিয়াল ফোন কী?

যেসব মোবাইল ফোন সরকারী ভ্যাট, ট্যাক্স এবং অনুমোদন না নিয়ে অবৈধ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দেশের বাজারে সরাসরি কাস্টমারের কাছে বিক্রয় করা হয় তাকে আনঅফিসিয়াল ফোন বলা হয়। এই ধরণের মোবাইলে অফিসিয়াল আপডেট পাওয়া যায় না এবং থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া, আনঅফিসিয়াল ফোনে পূর্ণ সার্ভিস ওয়্যারেন্টি পাওয়া যায় না, বৈধ মালিকানা পাওয়া যায় না পাশাপাশি ফোন হারালে সহজে পাওয়া যায় না।

 

বিটিআরসি মোবাইল নিবন্ধন চেক করা কেন জুরুরি

  • বিটিআরসি বা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন দেশের সকল মোবাইল ফোনের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর একটি ডাটাবেসে সংরক্ষরণ করে থাকে।
  • অফিসিয়াল ফোন হচ্ছে সেই ফোন, যা বৈধ আমদানিকারকের মাধ্যমে যথাযথ শুল্ক ও কর পরিশোধ করে দেশে আনা হয়েছে এবং যার আইএমইআই নম্বর বিটিআরসি-এর ডাটাবেসে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে।
  • অন্যদিকে, আনঅফিসিয়াল ফোন হচ্ছে যেগুলো অবৈধভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে আনা হয়েছে এবং সেগুলোর আইএমইআই নম্বর বিটিআরসির ডাটাবেসে নেই।
  • সরকার অবৈধ আমদানি বন্ধ করতে এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেকোনো সময় অনিবন্ধিত বা আনঅফিসিয়াল ফোন গুলো বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই, আপনার ফোনটি সচল রাখতে বিটিআরসি মোবাইল রেজিষ্ট্রেশন চেক করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

বিটিআরসি নিবন্ধন আছে কিনা তা মেসেজ আকারে দেখা

  • আপনার মোবাইল ফোনটি বিটিআরসি-এর ডাটাবেসে নিবন্ধিত রয়েছে তা যাচাই করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে এসএমএস পদ্ধতি। বিটিআরসি মোবাইল রেজিষ্ট্রেশন চেক করার জন্য আপনার ফোনের ১৫ সংখ্যার আইএমইআই নম্বরটি প্রয়োজন হবে।
  • আইএমইআই নম্বর বের করার উপায়ঃ আপনার ফোনের ডায়াল প্যাডে গিয়ে *#০৬# ডায়াল করবেন। সাথে সাথেই স্ক্রিনে আপনার ফোনের এক বা একাধিক আইএমইআই নম্বর দেখতে পাবেন। তবে, আপনি প্রথম আইএমইআই নম্বরটি ব্যবহার করলেই চলবে।

 

বিটিআরসি নিবন্ধন চেক করার ধাপ সমূহ

নিচের সহজ ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি মুহূর্তেই আপনার ফোনের নিবন্ধন সম্পর্কে জানতে পারবেন

১। আপনার মোবাইলের মেসেজ অপশনে যাবেন।

 

২। নতুন মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করবেনঃ বড় হাতের অক্ষরে KYD

 

৩। একটি স্পেস (Space) দিবেন।

 

৪। আপনার ফোনের ১৫ সংখ্যার আইএমইআই নম্বরটি লিখবেন।

 

৫। মেসেজটি পাঠিয়ে দিবেন ১৬০০২ নম্বরে।

 

উদাহরণ: KYD 123456789012345

 

ফিরতি মেসেজে জানতে পারবেন

  • "Device (IMEI: *********) is already registered in BTRC database." এর অর্থ হচ্ছে আপনার ফোনটি ইতিমধ্যে বিটিআরসি ডাটাবেজে নিবন্ধিত হয়েছে।

 

আর যদি নিবন্ধন করা না থাকে তাহলে

  • ডিভাইসটির IMEI বিটিআরসি'র ডাটাবেজে পাওয়া যায়নি, দয়া করে পূর্ণাঙ্গ IMEI(/,#,-সহ অন্যান্য বিশেষ চিহ্ন বাদে শুধুমাত্র ১৫টি নাম্বার) লিখে পুনরায় চেষ্টা করুণ। KYD 15 Digit IMEI Number লিখে 16002 তে পাঠিয়ে দিন।

 

আনঅফিসিয়াল ফোনকে অফিসিয়াল করার প্রক্রিয়া

যদি আপনার ফোনটি এসএমএস চেক করার পর "Not Found" দেখায়, অর্থাৎ এটি একটি আনঅফিসিয়াল ফোন হয়, তবে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আপনি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় এটির জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়াকে "বিশেষ নিবন্ধন" বলা হয়। এটি মূলত তাদের জন্য যারা বিদেশ থেকে সরাসরি ফোন কিনে এনেছেন বা উপহার পেয়েছেন।

 

বিটিআরসি মোবাইল রেজিস্ট্রেশন করার ধাপসমূহ

১। প্রথমে বিটিআরসি-এর ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (NEIR) পোর্টালে যাবেন। ওয়েব এড্রস হচ্ছেঃ neir.btrc.gov.bd

 

২। সাইটে প্রবেশ করে "বিশেষ নিবন্ধন" (Special Registration) অপশনটিতে ক্লিক করবেন।

 

৩। আপনার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর দিয়ে লগইন করবেন, কিছুক্ষণের মধ্যে একটি ওটিপি বা ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড আপনার নম্বরে আসবে।

 

৪। এবার একটি ফর্ম আসবে। সেখানে আপনার ফোনের আইএমইআই নম্বর, আপনার পাসপোর্ট নম্বর, এবং বিদেশ থেকে দেশে আসার তারিখ (ইমিগ্রেশন সিল অনুযায়ী) সঠিকভাবে পূরণ করবেন।

 

৫। আপনার পাসপোর্টের ভিসা পাতা এবং ইমিগ্রেশন সিলের পাতার ছবি বা স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে।

 

৬। যদি ফোনটি কেনার রসিদ থাকে, তবে সেটিও আপলোড করবেন।

 

৭। সকল তথ্য ঠিক থাকলে "Submit" বাটনে ক্লিক করবেন।

 

বিটিআরসি আপনার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করবে। যদি আপনার পাসপোর্ট এবং ইমিগ্রেশন তথ্য সঠিক থাকে, তাহলে তারা আপনার ফোনটিকে ডাটাবেসে অন্তর্ভুক্ত করে নেবে এবং আপনার আনঅফিসিয়াল ফোন সেটটি অফিসিয়াল হয়ে যাবে।

 

বিঃদ্রঃ বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা কাস্টমস রুলস অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক ফোন শুল্ক ছাড়া বা শুল্ক দিয়ে আনতে পারেন। সেই নিয়ম মেনেই এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া কাজ করে। আর, আপনি যদি দেশীয় কোনো দোকান থেকে আনঅফিসিয়াল ফোন কিনে থাকেন এবং আপনার কাছে কোনো বৈধ পাসপোর্ট বা আমদানির নথি না থাকে, তবে সেটিকে অফিসিয়াল করার প্রক্রিয়াটি বর্তমানে বেশ জটিল বা প্রায় অসম্ভব।

 

তাই সবসময় চেষ্টা করবেন বৈধ আমদানিকারক বা অথোরাইজড শোরুম থেকে অফিসিয়াল ফোন কেনার। এতে আপনি যেমন সঠিক মোবাইল পাবেন, তেমনি দেশের রাজস্ব আদায়েও ভূমিকা রাখতে পারবেন। আর যদি বিদেশ থেকে ফোন আনেন বা আনঅফিসিয়াল ফোন কিনেই ফেলেন, তবে যত দ্রুত সম্ভব উপরের ধাপ সমূহ অনুসরণ করে বিটিআরসি মোবাইল রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে নিবেন।

এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: November 06, 2025
Reviews (0) Write a Review