বৈদ্যুতিক কুকার হচ্ছে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে খাবার রান্না করার সহায়ক ডিভাইস। এটি মূলত শক্ত বৈদ্যুতিক প্লেট, কয়েল বার্নার, ওভেন কিংবা ইলেক্ট্রিক ইন্ডাকশন কুকটপ দিয়ে তৈরি ইন্ডাকশন কুকার। এটি রান্না করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তাপ দক্ষভাবে সরবারহ করে পাশাপাশি রান্নার সময় ও শক্তি সঞ্চয় করে। বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক কুকার রান্নার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক গ্যাসের সীমিত অ্যাক্সেস এবং এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস ব্যায় বহুল হওয়ায় বাংলাদেশের বাজারে বৈদ্যুতিক কুকারের চাহিদা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ফিলিপস, সেনকর, ওসাকা, মিয়াকো, কিয়াম এর মত জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের পাশাপাশি চায়না ও দেশীয় ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক কুকার বাংলাদেশে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়।
ইন্ডাকশন কুকার কেন কিনবো?
১। ইন্ডাকশন কুকার মূলত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইন্ডাকশনের মাধ্যমে রান্নার পাত্রকে সরাসরি গরম করে থাকে তাই দ্রুত রান্না করা যায়।
২। তাছাড়া ইন্ডাকশন কুকার রান্না পাত্রকে দ্রুত গরম করায় সময় অনেক লাগে।
৩। ইন্ডাকশন কুকারে সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা রয়েছে ফলে রান্নার প্রয়োজন অনুযায়ী তাপ সামঞ্জস্য করা যায়।
৪। এছাড়াও ইন্ডাকশন কুকারে বিল্ট-ইন সেফটি ফিচার রয়েছে যার ফলে কোনো কুকওয়্যার শনাক্ত না হলে কিংবা সরিয়ে নিলে অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়।
৫। ইন্ডাকশন কুকার মসৃণ ও সমতল হওয়ায় সহজেই পরিষ্কার করা যায়।
৬। রান্নার সময় ইন্ডাকশন কুকারের শুধুমাত্র কুকওয়্যার ও এর আশেপাশের অংশ গরম করে থাকে। ফলে কুকটপ স্পর্শ করলে পোড়ার সম্ভবনা খুবই কম।
৭। চাইল্ড সেফটি লক সহ বিভিন্ন ধরণের সেফটি ফিচারের সমন্বয়ে ইন্ডাকশন কুকার ডিজাইন করা হয়েছে। ফলে এই ধরণের ইলেকট্রিক কুকার ব্যবহারে দুর্ঘটনার ঝুকি অনেক কম।
৮। ইন্ডাকশন কুকার মসৃণ এবং আধুনিক ডিজাইনে তৈরি হওয়ায় রান্নাঘরের আকর্ষণীয় করে তুলবে।
৯। পাশাপাশি ইন্ডাকশন কুকার অন্যান্য কুকারের তুলনায় প্রায় শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে।
বৈদ্যুতিক কুকার কেনার আগে
পাওয়ার রেটিংঃ বাসা-বাড়ির বৈদ্যুতিক পাওয়ার এর সাথে চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় রান্নার কাজ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ইলেকট্রিক কুকারের পাওয়ার রেটিং অবশ্যই যাচাই করতে হবে।
বৈদ্যুতিক কুকারের ক্যাপাসিটিঃ সাধারণত বৈদ্যুতিক কুকারে কত লোকের জন্য রান্না করা যাবে এবং চাহিদা অনুযায়ী ইলেকট্রিক কুকারের ক্যাপাসিটি রয়েছে কিনা তা যাচাই করতে হবে।
পাওয়ার লেভেলঃ বৈদ্যুতিক কুকারে রান্না করার ক্ষেত্রে প্রেসার কুকিং, স্লো কুকিং, স্যুটিং এবং স্টিমিং এর মত পাওয়ার সেটিংস কম বা বেশি করা যাবে কিনা তা যাচাই করতে হবে।
তৈরিকৃত উপাদানঃ বৈদ্যুতিক কুকার সাধারনত স্টেইনলেস স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, রাবারের সমন্বয়ে তৈরি যা যথেষ্ট টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার উপযোগী হয়ে থাকে। তাই বৈদ্যুতিক কুকার কেনার ক্ষেত্রে যাচাই করতে হবে।
বৈদ্যুতিক কুকার প্লেটঃ ইন্ডাকশন কুকারে বিভিন্ন ধরণের প্লেট থাকে যেমন মাইক্রো ক্রিস্টাল, সিরামিক টেম্পার গ্লাস, ক্রিস্টাল গ্লাস, পলিশড ক্রিস্টাল প্লেট সহ বিভিন্ন ধরনের প্লেটের সমন্বয়ে পাওয়া যায়। তাই বৈদ্যুতিক কুকার কেনার আগে অবশ্যই প্লেট যাচাই করতে হবে।
নন স্টিক ইনার পটঃ বৈদ্যুতিক কুকার সহজে পরিষ্কার এবং রান্নার পর খাবার ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য সুবিধাজনক নন স্টিক ইনার পট রয়েছে কিনা তা যাচাই করতে হবে।
সেফটি ফিচারঃ বৈদ্যুতিক কুকার ব্যবহারে যেকোনো ধরণের দুর্ঘটনা এড়াতে চাইল্ড লক, ওভারহিট প্রটেকশন, সেলফ লুব্রিকেন্ট ফ্যান, অটোমেটিক পাওয়ার অফ অন ফাংশন রয়েছে কিনা যাচাই করতে হবে।
বাজেট সামঞ্জস্যতাঃ বাংলাদেশে ভিশন, ফিলিপস সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক কুকার ভিন্ন ভিন্ন মডেলে পাওয়া যায়। মডেল এবং ফিচার সমূহের উপর ভিত্তি করে ইন্ডাকশন কুকারের দাম কম বেশি হয়ে থাকে। তাই বাজেটের সাথে সামঞ্জস্য এবং মান সম্পন্ন বৈদ্যুতিক কুকার যাচাই করতে হবে।
গ্যাস কুকারের চেয়ে কি বৈদ্যুতিক কুকার সাশ্রয়ী?
হ্যা, গ্যাস কুকারের তুলনায় বৈদ্যুতিক কুকার যথেষ্ট সাশ্রয়ী। কারণ বৈদ্যুতিক কুকার ব্যবহারে আলাদাভাবে গ্যাস লাইন সেট আপ এর প্রয়োজন হয় না। পাশাপাশি গ্যাস কুকারের তুলনায় বৈদ্যুতিক কুকার ব্যবহারে রান্নার পাত্রকে সরাসরি গরম করে থাকে ফলে তাপের অপচয় কম হয়। এছাড়াও গ্যাস কুকারের তুলনায় বৈদ্যুতিক কুকার রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামত খরচ অনেক কম হয়ে থাকে।
বৈদ্যুতিক কুকারের দাম কত?
বৈদ্যুতিক কুকারের দাম সাধারণত ব্র্যান্ড, মডেল, সাইজ, ফিচারস এবং গুণমানের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক কুকারের দাম ১৪০০ টাকা থেকে শুরু যা সিংগেল বার্নার দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশে মান সম্পন্ন ইন্ডাকশন কুকারের দাম ৩০০০ টাকা থেকে শুরু। পাশাপাশি ডিজিটাল ডিসপ্লে ও উন্নত সেফটি ফিচার সম্পন্ন বৈদ্যুতিক কুকারের দাম ৬,০০০ টাকার বেশি।