প্রজেক্টর আবিষ্কারের পর থেকে যেকোনো জায়গায় প্রজেক্টর ব্যবহারের জন্য প্রজেক্টরের পর্দার ব্যবহার করা হয়। প্রজেক্টর পর্দা হলো মূলত সাদা রঙের পর্দা যা প্রজেক্টরের অভিক্ষিপ্ত চিত্র দর্শকদের দেখার জন্য প্রদর্শন করে থাকে। বিভিন্ন অফিসে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন বিষয় উপস্থাপনা করতে ও শিক্ষা মূলক ভিডিও দেখার জন্য প্রজেক্টরের সাথে প্রজেক্টর পর্দার ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া, বিনোদন মূলক ভিডিও এবং ফুটবল বিশ্বকাপ খেলা বড় পর্দায় দেখার জন্য প্রজেক্টর পর্দা ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে সাশ্রয়ী মূল্যে বিভিন্ন সাইজের ও ধরনের প্রজেক্টর পর্দা পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে প্রজেক্টর পর্দার দাম কত?
বাংলাদেশে প্রজেক্টর পর্দার দাম ৩,০০০ টাকা থেকে শুরু হয় যা ট্রাইপড টাইপ প্রজেক্টর পর্দা এবং সাইজে ৬০ ইঞ্চি x ৬০ ইঞ্চি হয়ে থাকে। তাছাড়া, সিলিং ম্যানুয়াল স্ক্রিন এর দাম ৩,৫০০ টাকা থেকে শুরু যার সাইজ ৭০ ইঞ্চি x ৭০ ইঞ্চি হয় এবং ইনডোরে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। অন্যদিকে, ইলেকট্রিক প্রজেক্টর পর্দার দাম ৭,৫০০ টাকা থেকে শুরু হয় যার সাইজ ৭০ ইঞ্চি x ৭০ ইঞ্চি হয়। তবে, বিডিতে প্রজেক্টর পর্দার দাম এর সাইজের ভিত্তিতে বাড়তে থাকে। এবং, বর্তমানে ৬০ ইঞ্চি x ৬০ ইঞ্চি, ৭০ ইঞ্চি x ৭০ ইঞ্চি, ৯৬ ইঞ্চি x ৯৬ ইঞ্চি, ৯০ ইঞ্চি x ১২০ ইঞ্চি, এবং ১০৮ ইঞ্চি x ১৪৪ ইঞ্চি সাইজের প্রজেক্টর পর্দা বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে কয় ধরনের প্রজেক্টর পর্দা পাওয়া যায়?
ব্যবহার প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশী বাজারে কয়েকধরনের প্রজেক্টর পর্দা পাওয়া যায়। প্রজেক্টর পর্দার ধরন ও ব্যবহার প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ
ম্যানুয়াল প্রজেক্টর স্ক্রিনঃ ম্যানুয়াল প্রজেক্টর স্ক্রিন একটি শেলের মধ্যে রোটেটিং অবস্থায় ভাঁজ করা থাকে যা ব্যবহারকারী প্রয়োজন অনুযায়ী ম্যানুয়ালি শেলের মধ্য থেকে সাদা পর্দা উপরে এবং নিচে টেনে সেট করতে পারে। ম্যানুয়াল প্রজেক্টর স্ক্রিনের দাম তুলনামূলক কম হয়ে থাকে ফলে, অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক হারে ম্যানুয়াল প্রজেক্টর স্ক্রিন ব্যবহার করা হয়। ম্যানুয়াল প্রজেক্টর পর্দাগুলো নির্দিষ্ট স্থানের সিলিং এবং দেওয়ালে সহজেই সেটআপ করে ব্যবহার করা যায়।
বৈদ্যুতিক প্রজেক্টর স্ক্রিনঃ বৈদ্যুতিক প্রজেক্টর পর্দা রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমের সাহায্যে সহজেই প্রয়োজন অনুপাতে উপরে উঠানো এবং নিচে নামানো যায়। এবং, বৈদ্যুতিক প্রজেক্টর স্ক্রিনগুলো ম্যানুয়াল প্রজেক্টর পর্দার মত একটি শেলের মধ্যে রোটেটিং অবস্থায় ভাঁজ করা থাকে। এই প্রজেক্টর পর্দা নির্দিষ্ট স্থানের সিলিং, দেওয়াল, এবং ফ্লোরে সেটআপ করা যায়। বৈদ্যুতিক স্ক্রিনগুলো দেখতে খুবি আকর্ষনীয় হয়ে থাকে যা অফিসিয়াল উপস্থাপনা রুম ও হোম থিয়েটারের জন্য উপযুক্ত। বর্তমানে অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপস্থাপনা রুমকে প্রফেশনাল দেখানোর জন্য বৈদ্যুতিক প্রজেক্টর পর্দা ব্যাপক ব্যবহার করা হচ্ছে।
ট্রাইপড প্রজেক্টর স্ক্রিনঃ ট্রাইপড প্রজেক্টর পর্দাগুলো যেকোনো জায়গায় একটি ট্রাইপড স্ট্যান্ডের উপর ম্যানুয়ালি সেটআপ করা হয়। এই প্রজেক্টর পর্দাগুলো খুবি হালকা হয়ে থাকে ফলে সহজেই যেকোনো জায়গায় বহন করে নেওয়া যায়। তাই, ট্রাইপড প্রজেক্টর পর্দা বিশ্বব্যাপী পোর্টেবল প্রজেক্টর পর্দা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এমনকি, বড় কোনো আলোচনা সভায় এবং বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখার জন্য খোলা মাঠে একাধিক ট্রাইপড প্রজেক্টর পর্দা সেটআপ করা যায়।
ফিক্সড প্রজেক্টর স্ক্রিনঃ ফিক্সড প্রজেক্টর পর্দাগুলো নির্দিষ্ট স্থানে সেটআপ করার পর এর জায়গা পরিবর্তন করা যায় না। এই পর্দা সাধারণত হোম থিয়েটার, থিয়েটার, খেলার স্টেডিয়াম, এবং বড় কোন খোলা জায়গায় সেখানে নিয়মিত ভিডিও উপোভোগ করা হবে এমন স্থানে ব্যবহার করা হয়। ফিক্সড প্রজেক্টর পর্দার দাম তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে।
প্রজেক্টর স্ক্রিন পেইন্টঃ প্রজেক্টর পর্দার বিকল্প হিসেবে প্রজেক্টর স্ক্রিন পেইন্ট ব্যবহার করা হয় যা দ্বারা নির্দিষ্ট দেওয়ালে সাদা রং করা হয় এবং প্রজেক্টর পর্দা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তুলনামূলক কম খরচে প্রজেক্টর স্ক্রিন পেইন্ট দ্বারা প্রজেক্টর পর্দা তৈরি করা যায়।
এছাড়াও, ডিজিটার প্রজেক্টর পর্দা বাংলাদেশে পাওয়া যায় যাতে ৪কে এবং ৮কে ভিডিও উপোভোগ করা যায়। এই প্রজেক্টর পর্দা সাধারণ সাদা পর্দা থেকে উন্নত মানের হয়ে থাকে। তবে, ডিজিটাল প্রজেক্টর পর্দা দাম তুলনামূলক অনেক বেশি হয়।
প্রজেক্টর পর্দা কেনার আগে কি কি দেখতে হবে?
স্থান ও ব্যবহারের সুবিধার ভিত্তিতে প্রজেক্টর পর্দা কেনার আগে কিছু বিষয় বিবেচনা করত হবে।
- ইনডোর ও আউটডোর ব্যবহারের ভিত্তিতে প্রজেক্টর নির্বাচন করতে হবে। ইনডোরে জন্য ম্যানুয়াল, ইলেকট্রিক, ফিক্সড প্রজেক্টর স্ক্রিন, এবং প্রজেক্টর স্ক্রিন পেইন্ট ব্যবহার করা উত্তম। এবং আউটডোরের ক্ষেত্রে ট্রাইপড প্রজেক্টর পর্দা, ফিক্সড প্রজেক্টর স্ক্রিন, এবং প্রজেক্টর স্ক্রিন পেইন্ট ব্যবহার করা যায়।
- প্রজেক্টর এর প্রজেকশন ক্ষমতার ভিত্তিতে প্রজেক্টর পর্দার সাইজ নির্বাচন করতে হবে। এছাড়াও, ইনডোর বা আউটডোর স্থানের প্রজেক্টর সেটআপের জায়গার ভিত্তিতে প্রজেক্টর পর্দা কিনতে হবে।
- অফিসি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রজেকশন রুমের অভ্যন্তরিন ডিজাইনের ভিত্তিতে ম্যানুয়াল বা ইলেকট্রিক প্রজেক্টর পর্দা নির্বাচন করতে হবে।
- প্রজেক্টর পর্দায় প্রয়োজন মাফিক সঠিক রেজোলিউশন ভিডিও প্রদর্শন হচ্ছে কিনা তা যাচাই করতে হবে।
- বাজেট বিবেচনায় প্রজেক্টর পর্দা নির্বাচন করতে হবে।
কিভাবে প্রজেক্টর স্ক্রিন সেটআপ করব?
প্রজেক্টরের সাথে সঠিক ভাবে প্রজেক্টর স্ক্রিন সেটআপ এর মাধ্যমে আরামদায়কভাবে প্রজেকশনকৃত ভিডিও উপভোগ করা যাবে। প্রজেক্টরের নির্দিষ্ট স্থানের দূরে বা কাছে প্রজেক্টর পর্দা স্থাপন করলে সঠিক ফ্রেমে প্রজেকশন সম্ভব নয়। তাই, প্রজেক্টর পর্দা সেটআপের কিছু টিপস উল্লেখ করা হলঃ
স্টেপ ১ঃ সঠিক অবস্থান নির্বাচন করুন। যেখানে সূর্যের আলো বা ঘরের লাইট সরাসরি প্রতিফলিত করে না, এমন জায়গা প্রজেক্টর স্ক্রিনের জন্য নির্বাচন করতে হবে। যাতে করে প্রজেক্টরের অভিক্ষিপ্ত চিত্র সঠিক রূপে প্রদর্শিত হয়।
স্টেপ ২ঃ পছন্দকৃত জায়গায় প্রজেক্টর শেল সেটআপ করুন। ম্যানুয়াল বা ইলেকট্রিক প্রজেক্টর পর্দা ব্যবহার করলে সিলিং বা দেওয়ালে প্রজেক্টর শেল স্থাপন করতে হবে। আর, ট্রাইপড প্রজেক্টর পর্দার ক্ষেত্রে ট্রাইপড খুলে নির্দিষ্ট স্থানে বসালেই হবে।
স্টেপ ৩ঃ রুমের জায়গা অনুযায়ী মূল প্রজেক্টর পর্দাটি সেটআপ সম্পন্ন করুন। ম্যানুয়াল প্রজেক্টর পর্দা হলে তা ম্যানুয়ালি টেনে অন্যদিকে বা ইলেকট্রিক প্রজেক্টর হলে তা রিমোটের সাহায্যে উপরে ও নিচে করে সেটআপ করতে হবে।
স্টেপ ৪ঃ প্রজেক্টর চালু করুন এবং নির্দিষ্ট দূরত্বে নিয়ে দেখুন ভিডিও রেজোলিউশন ঠিক আছে কিনা। এবং নির্দিষ্ট দূরত্বে প্রজেক্টর সেটআপ সম্পন্ন করুন। পরিশেষে প্রজেক্টরের অনুভূমিক এবং উল্লম্ব লেন্স শিফট সামঞ্জস্য করে প্রজেক্টর পর্দায় ভিডিও উপভোগ করুন।