ধান কাটার মেশিন কেনাকাটা
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায়, ধান হচ্ছে প্রধান ফসল। তাই, ধান কাটার ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগত ভাবে কায়িক শ্রম জড়িত, যা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। কম খরচে এবং স্বল্প সময়ে ধান কাটার জন্য বাংলাদেশের বাজারে বিস্তৃত পরিসরে ধান কাটার মেশিন পাওয়া যায়। এই ধরণের মেশিন ব্যবহারের ফলে শ্রম এবং সময় উভয়ই সাশ্রয় হয় পাশাপাশি ফসল কাটার সময় শস্যের কম ক্ষতি হয়ে থাকে। বর্তমানে, উন্নত টেকনোলোজির সমন্বয়ে তৈরি বিস্তৃত পরিসরের হার্ভেস্টার মেশিন বাংলাদেশে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়, যা কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ধান কাটার মেশিনের ধরণ
কৃষকের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী বাংলাদেশের বাজারে হাতে চালানো এবং ট্রাক্টরের সমন্বয়ে ব্যবহারের উপযোগী ধান কাটার সহ বিভিন্ন ধরনের হারভেস্টার মেশিন পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য ধান কাটার মেশিন হচ্ছে
২-স্ট্রোক রাইস হার্ভেস্টার মেশিনঃ এই ধরণের ধান কাটার মেশিন মূলত ২-স্ট্রোক ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি এবং ছোট আকারের হয়ে থাকে। তাছাড়া, এই ধরণের মেশিন ছোট পরিসরের ধান ক্ষেতের ফসল কাটার কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি ওজনে হালকা এবং সহজে অপারেট করা যায়। এই ধরনের ধান কাটার মেশিনের কাটিং লেন্থ সরু হয়ে থাকে। ফলে, ২-স্ট্রোক হার্ভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার ক্ষেত্রে শারিরিক পরিশ্রম কম হয় পাশাপাশি কম সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী ধান কাটা যায়।
৪-স্ট্রোক রাইস হার্ভেস্টার মেশিনঃ ৪-স্ট্রোক ধান কাটার মেশিন সাধারণত শক্তিশালী ৪-স্ট্রোক ইঞ্জিন দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি মাঝারি থেকে বড় আকারের ধান ক্ষেতের ফসল কাটার জন্য উপযুক্ত। পাশাপাশি ২-স্ট্রোক ভেরিয়েন্টের হার্ভেস্টার মেশিনের তুলনায় উচ্চ ক্যাপাসিটি সম্পন্ন এবং বৃহত্তর কাটিং লেন্থ রয়েছে। ফলে, বড় পরিসরের ধান ক্ষেতের ফসল দ্রুত কাটা যায় এবং যথেষ্ট কম খরচ হয়।
কম্বাইন্ড রাইস হার্ভেস্টার মেশিনঃ কম্বাইন রাইস হার্ভেস্টার মেশিন হচ্ছে অত্যন্ত উন্নত এবং বহুমুখী সুবিধা সম্পন্ন হার্ভেস্টার মেশিন। এই ধরণের মেশিন দিয়ে বড় পরিসরের ধান ক্ষেতের ফসল সহজেই কাটা যায়। তাছাড়া, কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা, মাড়াই, খড় থেকে শস্য আলাদা করা সহ কাটা ধান পাত্রে সংগ্রহ করার জন্য একাধিক ফাংশন যুক্ত রয়েছে। এই মেশিনটি অত্যন্ত দক্ষ ভাবে যথেষ্ট কার্যকর কর্মক্ষমতা প্রদান করে।
ধান কাটার মেশিনের দাম
বাংলাদেশে ধান কাটার মেশিনের দাম ১৪,০০০ টাকা থেকে শুরু, যা ২-স্ট্রোক ইঞ্জিন বিশিষ্ট এবং যথেষ্ট জ্বালানী সাশ্রয়ী হয়ে থাকে। তাছাড়া, বাংলাদেশে ধান কাটার মেশিনের দাম মূলত মডেল, ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি, ফুয়েল ক্যাপাসিটি, মেশিন টাইপ সহ অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। ৪-স্ট্রোক ইঞ্জিন যুক্ত ধান কাটার মেশিন ২৬,০০০ টাকা থেকে ৪০,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। এছাড়াও, কম্বাইন রাইস হার্ভেস্টার মেশিন দাম ৭০,০০০ টাকা থেকে শুরু।
ধান কাটার মেশিন কেনার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় দেখতে হবে
ধান কাটার মেশিন কেনার সময় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করতে হবে, যা দীর্ঘস্থায়ীভাবে হার্ভেস্টার মেশিন ব্যবহারের নিশ্চয়তা প্রদান করবে।
মেশিনের ধরণঃ কম্বাইন হারভেস্টার, প্যাডি রাইস কাটার মেশিন, মিনি ধান কাটার মেশিন সহ ধান কাটার মেশিনের বিভিন্ন ধরণের ধান কাটার মেশিন বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায়। তাই, প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক মেশিনটি কেনার জন্য মেশিনের ধরণ যাচাই করতে হবে।
মেশিনের কার্যক্ষমতাঃ জমির আকার ও ধানের পরিমাণ অনুযায়ী মেশিনের কার্যক্ষমতা নির্ধারণ করতে হবে। তাহলে, ধান কাটার ক্ষেত্রে জমির আকার অনুযায়ী কার্যকর কর্মক্ষমতা পাওয়া যাবে।
মেশিনের দাম যাচাইঃ বিভিন্ন ব্র্যান্ড, মডেল এবং টেকনোলোজি ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে ধান কাটার মেশিনের দামের পার্থক্য হয়ে থাকে। তাই, বাজেটের মধ্যে ধান কাটার মেশিন কেনার জন্য মেশিনের দাম যাচাই করতে হবে।
কাজের ধরণঃ ধান কাটার মেশিন ব্যবহার করে ধান কাটা, ধান সারানো, ধান সংগ্রহ সহ বিভিন্ন ধরণের কাজ করা যায়। তাই, ধান কাটার মেশিন কেনার আগে কাজের ধরণ নির্ধারণ করতে হবে।
মেশিনের ক্ষমতাঃ জমির আকার ও ধানের পরিমাণ নির্ধারণ করে মেশিনের ক্ষমতা যাচাই করতে হবে। তাছাড়া, বড় আকারের জমি ও বেশি ধান কাটার জন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ধান কাটার মেশিন বিবেচনা করতে হবে।
মেশিনের বিল্ড কোয়ালিটিঃ ধান কাটার মেশিন কেনার ক্ষেত্রে মেশিন উচ্চ মানের উপকরণ, গুনমান সম্পন্ন এবং মাঠে দীর্ঘ সময় ব্যবহারে কঠোরতা সহ্য করার সক্ষমতা রয়েছে কিনা তা যাচাই করতে হবে।
রক্ষণাবেক্ষণঃ ধান কাটার মেশিন কেনার ক্ষেত্রে মেশিনের ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হবে কিনা তা যাচাই করতে হবে। পাশাপাশি, এরগোনমিক ডিজাইন, কন্ট্রোল সিস্টেম এবং যথাযথ ইন্সট্রাকশন ইত্যাদি বিষয় সমূহ বিবেচনা করতে হবে, যা দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারের জন্য সহায়ক হবে।
বিক্রয়োত্তর সেবাঃ মসৃণভাবে অপারেট করার জন্য সময়মতো মেরামত সুবিধা পাওয়া টা খুবই জুরুরি। তাই প্রযুক্তিগত সহায়তা, খুচরা যন্ত্রাংশের সহজলভ্যতা এবং রক্ষণাবেক্ষণ পরিষেবা সুবিধা পাওয়া যাবে এমন নির্ভরযোগ্য প্রস্তুতকারক বা ডিলার যাচাই করে ধান কাটার মেশিন সংগ্রহ করা উচিত।