শাওমি মোবাইলের ইতিহাস
শাওমি ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল আটজন সহযোগীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলো। চীনের বেইজিং এ লি জুন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয় শাওমি কোম্পানি। শাওমির সর্বপ্রথম স্মার্টফোন বাজারে আসে ২০১১ সালে এবং ২০১৪ সালের মধ্যে সাড়া বিশ্বের বাজার দখল করে এবং চীনের সবচেয়ে বড় স্মার্টফোন কম্পানিতে পরিনত হয়। ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট তারিখে, শাওমি আনুষ্ঠানিকভাবে এর প্রথম অ্যান্ড্রয়েড-ভিত্তিক ফার্মওয়্যার এমআই ইউআই চালু হয়। শাওমি বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে।
শাওমি মোবাইলের দাম কত?
শাওমি মোবাইলের দাম ৩,০০০ টাকা থেকে শুরু এবং এটি দিয়ে পরিষ্কার করে কথা বলা যায় এবং মসৃণভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। আর কম দামের কারনে দেশের সবজায়গায় এর চাহিদা অনেক। তবে বাংলাদেশে নতুন মডেলের রেডমি ও এমআই সিরিজের দাম ১৫ হাজার টাকা থেকে শুরু এবং সাথে থাকবে দীর্ঘ ব্যটারি লাইফ ও উন্নতমানের ডিসপ্লে।
শাওমি রেডমি মোবাইলের মধ্যে পার্থক্য
এমআইঃ শাওমি স্মার্ট ফোনের মূল ব্র্যান্ড যাকে মি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই সিরিজটি উন্নত মানের বডি, দুর্দান্ত ক্যামেরা, দ্রুত সফ্টওয়্যার আপডেট এবং আরও ভাল গেমিং হার্ডওয়্যার সহ আসে।
রেডমিঃ শাওমির আলাদা একটি সাব ব্র্যান্ড হল রেডমি। শাওমির ব্যব মিইউআই অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করে রেডমি স্মার্ট ফোন। রেডমি মোবাইল শাওমির চেয়ে আরও কম মূলে বাজার জাত করে থাকে। রেডমি শাওমির ইউজার ইন্টারফেস এমআইইউআই অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করে। রেডমি মোবাইল এমআই এর চেয়ে কম ব্যয়বহুল হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে থাকে।
রেডমি সিরিজের মোবাইলের দাম কত?
বাংলাদেশে শাওমি রেডমি সিরিজের মোবাইলের দাম সাধারণত সিরিজের মডেল, স্পেসিফিকেশন এবং কান্ট্রি ভ্যারিয়েন্টের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশের বাজারে শাওমি রেডমি সিরিজের মোবাইল সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে রেডমি সিরিজের নতুন মোবাইলের দাম ১০,০০০ টাকা থেকে শুরু যা ৬.৫২ ইঞ্চির আইপিএস এলইডি ডিসপ্লে, ২/৩২ জিবি ভ্যারিয়েন্টের র্যাম, রোম এবং ৫০০০ এমএএইচ ব্যাটারি রয়েছে। এছাড়াও, আন অফিসিয়াল লেটেস্ট রেডমি মোবাইল পাওয়া যায় যার দাম রেডমি অফিসিয়াল মোবাইলের তুলনায় ২০% কম হয়ে থাকে। পাশপাশি, বাংলাদেশে পুরাতন কন্ডিশনের জনপ্রিয় মডেলের রেডমি মোবাইল পাওয়া যায়, যার দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক কম হয়ে থাকে।
শাওমি এমআই সিরিজের মোবাইলের দাম কত?
বাংলাদেশে শাওমি এমআই সিরিজের মোবাইল সাধারণত নতুন এবং পুরাতন উভয় কন্ডিশনে পাওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে এমআই সিরিজের মোবাইলের দাম ৩,৪০০ টাকা থেকে শুরু যা পুরাতন কন্ডিশনের হয়ে থাকে। এই কন্ডিশনের এম আই সিরিজের মোবাইল দিয়ে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারসহ প্রায় সকল ধরনের কাজ করা যায়। এছাড়াও বাংলাদেশে লেটেস্ট এমআই সিরিজের মোবাইলের দাম ১৩,০০০ টাকা থেকে শুরু যা ২/১৬ জিবি র্যাম, রোম, কোয়ালকম এমএসএম৮৯৪০ স্ন্যাপড্রাগন৪৩৫ প্রসেসর এবং ৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে রয়েছে। পাশাপাশি আরও উন্নত প্রসেসর, ক্যামেরা এবং ভিন্ন ভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের র্যাম, রোমের সমন্বয়ে বাংলাদেশে এমআই সিরিজের নতুন মডেলের মোবাইল পাওয়া যায়।
শাওমি নোট সিরিজ মোবাইলের সুবিধা কি?
শাওমি নোট সিরিজের মোবাইলে অনেক সুবিধা রয়েছে কিন্তু বাংলাদেশে দাম বেশি নয়। যে কেউ কমপক্ষে ৪০,০০০ টাকার মধ্যে উন্নত ফিচারযুক্ত শাওমি নোট সিরিজের মোবাইল সংগ্রহ করতে পারবেন। শাওমি নোট সিরিজের মোবাইলের সুবিধা হচ্ছেঃ
- শাওমি নোট সিরিজের মোবাইলে হাই রেজোলিউশনের বড় সাইজের ডিসপ্লে দিয়ে ডিজাইনে পাওয়া যায়। যা গেমিং, ভিডিও দেখা এবং অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
- শক্তিশালি প্রসেসর এবং পর্যাপ্ত র্যাম সম্পন্ন নোট সিরিজের মোবাইল পাওয়া যায়। ফলে মাল্টিটাস্কিং, দ্রুত অ্যাপ লঞ্চ, গেমিং, ভিডিও এডিটিং সহ বিভিন্ন কাজে যথেষ্ট কর্মক্ষমতা প্রদান করে।
- ফটোগ্রাফি করার জন্য একাধিক ক্যামেরা লেন্স, এআই ডিটেকশন, ন্যাচেরাল এবং নাইট মোড যুক্ত রয়েছে নোট সিরিজের মোবাইলে, যার ফলে উচ্চ মানে ছবি ও ভিডিও ক্যাপচার করা যায়।
- শাওমি নোট সিরিজের মোবাইলে ব্যাটারি ক্ষমতা বেশি থাকে, ফলে এই নোট সিরিজের মোবাইল ঘন ঘন চার্জ করার প্রয়োজন হয় না।
- নোট সিরিজের মোবাইলে শাওমির এমআইইউআই কাস্টমাইজড এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে। যা ব্যবহাকারীকে নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে উন্নত নিরাপত্তা, নতুন নতুন ফিচার প্রদান করে।
- শাওমি নোট সিরিজের মোবাইলে ৪জি/৫জি নেটওয়ার্ক, ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ এবং জিপিএস সহ বিভিন্ন কানেক্টিভিটি সুবিধা যুক্ত রয়েছে।
কেন শাওমি মোবাইল ভাল?
শাওমি মোবাইল বাংলাদেশে ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। শুধু বাংলাদেশেই নয় পৃথিবির অনেক দেশেও শাওমি ব্র্যান্ড তার স্মার্টফোনের বিশেষত্ব ও কম দামের জন্য ব্যপক আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। নিচে শাওমির স্মার্টফোন গুলোর কিছু বিশেষত্ব তুলে ধরা হলোঃ
১। শাওমি মোবাইলের প্রধান বৈশিষ্ট হল দীর্ঘ ব্যটারি লাইফ। এক চার্জেই এটি অনেকদিন চলতে পারে যা বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের জন্য অনেক ভাল। সাথে শাওমি মোবাইল গুলোতে ব্যাটারি সেভিং নামে একটি অপশন আছে যা অন করলে খুব চমৎকার ব্যাটারি ব্যাকআপ দিয়ে থাকে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায় যদি শাওমি ব্র্যান্ডের কোনো মোবাইলে ৪০০০ মিলি এম্পিয়ারের কোনো ব্যাটারি থাকে এবং সেটি ২ দিন চলতে সক্ষম হয় আর পাশাপাশি যদি ব্যাটারি সেভিং মোড চালু করা হয় তবে ব্যবহারকারী আরও ১ দিনের ব্যাটারি ব্যাকআপ পেয়ে যাবে।
২। ক্যামেরার দিক থেকে শাওমি ব্র্যান্ডের মোবাইলগুলো সবথেকে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে খুব অল্প সময়ে। নতুন অনেক আধুনিক ফিচার যেমন, প্যানারোমা, পোট্রেইট, ইফেক্ট, এইডিআর, স্লোমো ভিডিওসহ অনেককিছু যুক্ত করে আসছে শাওমি ব্রান্ড তার স্মার্টফোনগুলোতে অনেক বছর আগে থেকেই। এছাড়াও যেকোনো ছবি বা ভিডিও প্রফেশনাল লেভেলে এডিট করা যায় খুব সহজেই। ক্যামেরার দিক থেকে শাওমি ব্যান্ডের মোবাইলগুলি বাংলাদেশের মানুষের কাছে অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের তুলনায় বেশ প্রিয়।
৩। কাস্টিং টুলের সাথে বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি পরিচিত হয়েছে শাওমি ব্যান্ডের মোবাইলফোন গুলো থেকেই। শাওমির স্মার্টফোনগুলোতে এই কাস্টিং টুল থাকায় কোনো প্রেজেন্টেশন, ছবি বা ভিডিও অন্য কোন ডিভাইসে খুব সহজেই দেখা যায় বলে শাওমি স্মার্টফোন বাংলাদেশের চাহিদার তালিকায় শীর্ষে একটি ব্র্যান্ড।
৪। স্ক্যানার প্রযুক্তির সাথে শাওমি তার মোবাইলগুলোতে কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য যুক্ত করেছে। শুধুমাত্র বারকোড নয় বরং শাওমি ব্র্যান্ডের নতুন মোবাইল গুলো দিয়ে যেকোনো হাতের লেখাকে বুঝতে সহযোগিতা করে। প্রয়োজনীয় সকল অস্পষ্ট লেখা গুলো শাওমির নতুন প্রজন্মের মোবাইল বলে দিবে নির্ভুল ভাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে স্ক্যানিং জন্য বাংলাদেশে চলমান শাওমির কোনো মডেলেই থার্ডপার্টি স্ক্যানিং সফটওয়্যারের দরকার হয় না।
৫। বাংলাদেশে মধ্য বাজেটের ফোনগুলোর মধ্যে নিরাপত্তার দিক থেকে শাওমি ব্রান্ডের মোবাইলগুলো ভালো সিকিউরিটি প্রদান করে। শাওমির ফোন হারিয়ে গেলে দ্রুত খুঁজে পাওয়া যায় এবং দ্রুরবর্তী স্থান থেকে লক করে দেয়ার সুবিধা থাকছে। আর থাকছে নিয়মিত সিকিউরিটি আপডেট।
৬। শাওমির সকল মোবাইলে রয়েছে সেকেন্ড স্পেস নামে একটি বৈশিষ্ট্য। একটি মোবাইল যদি একাধিক জন ব্যবহার করে সে ক্ষেত্রে সেকেন্ড স্পেস মোড বেশি উপযোগী। সেকেন্ড স্পেসের সাহায্যে আলাদা করে আরও ইউজার তৈরি করা যায় ফলে প্রতিটি ইউজারের তথ্য আলাদা আলাদা থাকবে।
৭। শাওমির প্রতিটি স্মার্টফোনে আছে ডুয়াল মোড যা একটি ভাল প্রযুক্তি। বিভিন্ন সময়ে একটি অ্যাপে অনেক গুলো কাজ করতে হয় কিন্তু শাওমির ডুয়াল মোডের সাহায্যে একটি অ্যাপসকে দুইট অ্যাপসে রূপান্তর করা যায়। ফলে একাধিক কাজ একটি অ্যাপসের ২-টি কপির সাহায্যে সহজেই করা যায়।