bdstall.com

বাড়িতে রাখার মত জুরুরী চিকিৎসা সরঞ্জাম

বৈশ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি, খাদ্যদ্রব্যে অনিয়ন্ত্রিত পরিমাণে রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে দিন দিন আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আমাদের দেশে প্রায় বাসা-বাড়িতে কেউ না কেউ উচ্চ ও নিম্ন রক্তচাপ, ডায়বেটিস, ঠান্ডা- জ্বর, শ্বাসকষ্ট, হার্ট জনিত সমস্যা সহ বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এছাড়াও, শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সী কেউ দুর্ঘটনাবশত পড়ে গিয়ে কেটে যায় কিংবা ক্ষত সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত সময়ে জীবাণুমুক্ত রাখা উচিত। তাই, নিয়মিত সুস্থ জীবন-যাপনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম বাসায় রাখা খুবই জুরুরি। বর্তমানে, আমাদের দেশে জনপ্রিয় মার্কেট প্লেস বিডিস্টল.কম এ  সাশ্রয়ী দামে উন্নত টেকনোলোজির সমন্বয়ে তৈরি ডিজিটাল চিকিৎসা সরঞ্জাম পাওয়া যাচ্ছে। চলুন তাহলে নিজে এবং বাড়ির শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সী সকলকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ব্যবহার উপযোগী চিকিৎসা সরঞ্জাম সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক।

 

বাড়িতে রাখার মত জুরুরী চিকিৎসা সরঞ্জাম

 

১। বিপি মেশিন

বিপি মেশিন হচ্ছে  এমন এক ধরণের যন্ত্র যা একজন ব্যক্তির রক্তচাপের মাত্রা পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। এই ধরণের মেশিন মূলত ইনফ্ল্যাটেবল কাফ, চাপ পরিমাপক, এবং ডিসপ্লের সমন্বয়ে তৈরি। বাংলাদেশে ১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা বাজেটের মধ্যে ম্যানুয়াল এবং ডিজিটাল উভয় ধরণের ব্লাড প্রেসার মেশিন পাওয়া যায়। ম্যানুয়াল এবং ডিজিটাল উভয় ধরণের ব্লাড প্রেসার মেশিনই সঠিক রিডিং প্রদান করতে পারে। তবে, ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মেশিন সাধারণত সুবিধাজনক এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব, যার সাহায্যে বাড়িতে বসে নিজের রক্তচাপ নিজেই পরিমাপ করা যায়।

সুবিধাঃ

  • ব্লাড প্রেসার মেশিন বাড়িতে যেকোন বয়সী ব্যাক্তিদের রক্তচাপ সুবিধাজনকভাবে পরিমাপ করতে সহায়তা করে।
  • এটি রক্তচাপের ফলে যেকোন সম্ভাব্য সমস্যা সনাক্ত করতে সহায়তা করে।
  • এটি উচ্চ রক্তচাপের ফলে হাইপারটেনশন ও কার্ডিওভাসকুলারের মত রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

সতর্কতাঃ

  • বিপি মেশিনের সাথে থাকা ম্যানুয়াল গাইড দেখে সঠিক নির্দেশনা অনুযায়ী রক্তচাপ পরিমাপ করা উচিত।
  • পরিমাপ করার পর অস্বাভাবিক রিডিং দেখলে নিকটস্থ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

 

২। ডায়বেটিস মেশিন

ডায়াবেটিস মেশিন মূলত একটি গ্লুকোজ মিটার। এই ধরণের মেশিন সাধারণত পোর্টেবল হয়ে থাকে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপ করতে ডায়বেটিস মেশিন ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া, রক্তের নমুনা নেওয়ার জন্য ল্যানসেট রয়েছে যা দিয়ে ডায়বেটিস আক্রান্ত ব্যাক্তির আঙুল থেকে ১ মাইক্রো লিটারের কম রক্ত নিয়ে ডায়বেটিস মেশিনে পরিক্ষা করতে সহায়তা করে। বর্তমানে, বাংলাদেশের বাজারে ডায়বেটিস মেশিন ৬০০ থেকে ১৪০০ টাকা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায়।

সুবিধাঃ

  • ডায়াবেটিস মেশিন সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে সহায়তা করে।
  • এই মেশিন ডায়বেটিস রোগীর রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় বজায় রাখার জন্য তাদের খাদ্য, ওষুধ এবং জীবনধারা পছন্দ সম্পর্কে সচেতন থাকতে সহায়তা করে।
  • এছাড়াও, পরিবারের অন্যান্য ব্যাক্তিদের রক্তে শর্করার মাত্রা যাচাই করে ডায়বেটিসের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

সতর্কতাঃ

  • রক্তে শর্করার পরিমান যাচাইয়ের পর ল্যানসেট এবং মিটারে সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য জীবাণুমুক্ত করে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 
  • পাশাপাশি দীর্ঘদিন ব্যবহার উপযোগী রাখতে ডায়বেটিস মেশিনের ব্যাটারি নির্দিষ্ট সময় পর পরিবর্তন করতে হবে।
  • প্রতিবার ব্যবহারের আগে অবশ্যই গ্লুকো মিটারের ডাটা রিসেট করতে হবে। এছাড়া, ডায়বেটিস আক্রান্ত ব্যাক্তির রক্তে শর্করার পরিমাপ অসামঞ্জস্য দেখায় সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

 

৩। থার্মোমিটার

থার্মোমিটার হচ্ছে তাপ মাপার যন্ত্র, যার সাহায্যে যেকোনো ব্যাক্তির শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করা যায়। বাসা বাড়িতে চিকিৎসা সরঞ্জাম হিসেবে থার্মোমিটার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, বাসা বাড়িতে শিশু থেকে বয়স্ক লোকদের কেউ জ্বরে আক্রান্ত কিনা তা থার্মোমিটার ব্যবহারের মাধ্যমে সহজে শনাক্ত করা যায়। বর্তমানে ডিজিটাল থার্মোমিটার দ্রুত সময়ে সঠিক রিডিং প্রদান করায় বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা বাজেটের মধ্যে থার্মোমিটার পাওয়া যায়।

সুবিধাঃ

  • বাসা-বাড়িতে যেকোনো বয়সের ব্যাক্তির শরীরের তাপমাত্রার পরিবর্তন যাচাই করার জন্য দ্রুত এবং কার্যকর সুবিধা প্রদান করে।
  • নিয়মিত তাপমাত্রা পরীক্ষা করার মাধ্যমে পরিবারের কোনো ব্যাক্তির তাপমাত্রা অস্বাভাবিক রিডিং দেখার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে সহায়তা করে।
  • এছাড়াও, বাসা-বাড়িতে চিকিৎসা সরঞ্জাম হিসেবে থার্মোমিটার থাকলে পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন নেই বললেই চলে।

সতর্কতাঃ

  • থার্মোমিটারের সঠিক ব্যবহার এবং পরিষ্কারের জন্য প্রস্তুতকারকের নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে হবে।
  • বর্তমানে, ডিজিটাল, ইনফ্রারেড এবং পারদ-ভিত্তিক থার্মোমিটার সহ বিভিন্ন ধরনের থার্মোমিটার বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায়। প্রতিটি ধরণের এর আলাদা আলাদা সুবিধা প্রদান করে, তাই সঠিক তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য প্রস্তুতকারকের নির্দেশাবলী অনুসরণ করা অপরিহার্য।

 

৪। ফাস্ট এইড বক্স

ফাস্ট এইড বক্স বাসা-বাড়ির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম। এই ধরণের বক্সে সাধারণত ব্যান্ডেজ, এন্টিসেপ্টিক, পেইনকিলার, ড্রেসিং আইটেম সহ বিভিন্ন ধরণের উপকরণ থাকে। ছোটো খাটো আঘাত কিংবা অন্যান্য রোগের প্রাথমিক চিকিৎসায় এবং চিকিৎসক কাছে পৌছানোর আগ পর্যন্ত ইমারজেন্সি সাপোর্ট প্রদানে ফাস্ট এইড বক্স যথেষ্ট কার্যকর। আমাদের দেশের বাজারে ফাস্ট এইড বক্স সাধারণত ৪০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায়।

সুবিধাঃ

  • বাসা-বাড়িতে, কর্মক্ষেত্রে ভালো মজবুত ফাস্ট এইড বক্স থাকলে ছোটখাটো আঘাত বা জরুরী চিকিৎসায় দ্রুত সমাধান করতে সাহায্য করে।
  • স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা সহায়তা নেওয়ার আগে তাত্ক্ষণিক চিকিৎসা প্রদানে সহায়তা করে এবং সম্ভাব্য জটিলতা হ্রাস করে।
  • পরিবারে অন্যান্য ব্যাক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসার কৌশল সম্পর্কে জানার জন্য মূল্যবান সরঞ্জাম হিসেবে কাজ করে।

সতর্কতাঃ

  • ফার্স্ট এইড বক্স উপকারী হলেও প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 
  • প্রয়োজনে পেশাদার চিকিৎসা সহায়তা নিতে হবে। এছাড়াও, ফাস্ট এইড বক্স থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ আইটেমগুলো পরিবর্তন করতে হবে ৷

 

৫। পালস অক্সিমিটার

পালস অক্সিমিটার হচ্ছে এমন এক ধরণের ডিভাইস যার সাহায্যে রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাত্রা এবং হৃদস্পন্দন পরিমাপ করতে সহায়তা করে। এটি সাধারণত আঙুল বা কানের লতিতে ক্লিপ হিসেবে ব্যবহার করে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করতে সহায়তা করে। এই ধরণের ডিভাইস শ্বাসকষ্ট জনিত রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। বর্তমানে, বাংলাদেশে পালস অক্সিমিটার ৭০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায়।

সুবিধাঃ

  • বাসা-বাড়িতে শ্বাসকষ্ট আক্রান্ত ব্যাক্তিদের অসুস্থ অবস্থায় কিংবা শারীরিক পরিশ্রমের সময় শ্বাসযন্ত্রের অবস্থা সম্পর্কে রিডিং প্রদান করে।
  • এছাড়াও, ফুসফুসের কার্যকারিতা এবং সম্ভাব্য অক্সিজেনেশন সমস্যা সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
  • পালস অক্সিমিটার ছোট ও পোর্টেবল হওয়ায় বাসা-বাড়িতে ব্যবহারের পাশাপাশি যেকোনো জায়গায় ভ্রমণে সাথে রাখা যায়।

সতর্কতাঃ

  • পালস অক্সিমিটারের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে যা চিকিৎসা পরামর্শ বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়। 
  • পরিবারে কারোর যদি শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি পালস অক্সিমিটার সাথে রাখা উচিত।

 

৬। ফেস মাস্ক

ফেস মাস্ক হচ্ছে এক ধরণের প্রতিরক্ষামূলক আবরণ যা নাক এবং মুখের উপর পরা হয়। কাপড়ের তৈরি, সারজিক্যাল, কেএন৯৫, কার্বন মাস্ক সহ বিভিন্ন ধরণের মাস্ক আমাদের দেশের বাজারে পাওয়া যায়। এটি মূলত ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া সহ বায়ুবাহিত কণার সংক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখতে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে ফেস মাস্ক ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায়।

সুবিধাঃ

  • ফেস মাস্ক এক ধরণের শারীরিক বাধা হিসাবে কাজ করে যা মূলত ক্ষতিকারক ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে সহায়তা করে।
  • এছাড়াও, বায়ুবাহিত এলারজেন সহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগের বিস্তার কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি, ফেস মাস্ক ব্যবহারকারী এবং তার আশেপাশের উভয়কেই সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সতর্কতাঃ

  • ফেস মাস্ক সঠিকভাবে পরা উচিত যাতে নাক এবং মুখ উভয়ই ঢাকা থাকে। ব্যবহারে পর নিয়মিত ধুয়ে রাখা উচিত কিংবা প্রতিস্থাপন করা উচিত।

 

৭। ওয়েট স্কেল মেশিন

ওয়েট স্কেল মেশিন এমন এক ধরণের ডিভাইস যা শরীরের ওজন সঠিকভাবে পরিমাপ করতে ব্যবহার করা হয়। এই মেশিনের সাহায্যে সঠিক ওজন রিডিং প্রদান করতে সেন্সর এবং ডিজিটাল ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে।বাংলাদেশে ওয়েট স্কেল মেশিন ৯০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায়।

সুবিধাঃ

  • ওয়েট স্কেল মেশিন পরিবারের সদস্যদের ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করতে সহায়তা করে।
  • এছাড়া, উন্নত ফিটনেস বজায় রাখার জন্য ওয়েট স্কেল মেশিন কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
  • ডায়বেটিস, শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিদের উচ্চতা, বয়স অনুযায়ী সঠিক ওজন বজায় রাখতে সহায়তা করে।

সতর্কতাঃ

  • সঠিক রিডিংয়ের জন্য ওয়েট স্কেল মেশিন সর্বদা সমতল এবং স্থিতিশীল পৃষ্ঠে রেখে ব্যবহার করা উচিত।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: November 18, 2023
Reviews (0) Write a Review