bdstall.com

ফটোকপিয়ার বনাম মাল্টিফাংশন প্রিন্টার

অফিস, ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সঠিক সরঞ্জাম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও ব্যবসায়িক সাফল্য লাভের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা অফিসের ডকুমেন্ট প্রসেস এর ক্ষেত্রে ফটোকপিয়ার এবং মাল্টি ফাংশন প্রিন্টার দুটোই আদর্শ বিকল্প। দুটো ডিভাইসই ব্যবহারের দিক থেকে একই হলেও তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পার্থক্য রয়েছে। চলুন তাহলে ফটোকপিয়ার এবং মাল্টি ফাংশন প্রিন্টারের বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

 

ফটোকপিয়ার বনাম মাল্টিফাংশন প্রিন্টার

 

১। ফাংশনালিটি

ফটোকপিয়ার সাধারণত ব্যবসায়িক কাজের জন্য আদর্শ মেশিন, যা কম সময়ে উচ্চ কর্মক্ষমতা সম্পন্ন প্রিন্ট সুবিধা প্রদান করে। এই মেশিন দিয়ে স্ক্যান, ফ্যাক্স করার পরিবর্তে শুধুমাত্র প্রিন্ট করা যায়। অন্যাদিকে মাল্টিফাংশন প্রিন্টার দিয়ে ডকুমেন্ট প্রিন্ট করার পাশাপাশি কপি, স্ক্যান এমনকি ফ্যাক্সও করা যায়। এই ধরণের প্রিন্টার মূলত অফিস কিংবা স্টুডিও, কালার ল্যাব গুলোতে ব্যবহারের জন্য আদর্শ।

 

২। প্রিন্ট ক্যাপাসিটি

ফটোকপিয়ার দিয়ে তুলনামূলকভাবে মাল্টিফাংশন প্রিন্টারের চেয়ে কম সময়ে বেশি প্রিন্ট করা যায়। ফটোকপিয়ার মেশিন দৈনিক প্রায় ১২০০ থেকে ৩৫০০ পেইজ প্রিন্ট করা যায়। অন্যদিকে মাল্টিফাংশন প্রিন্টার দিয়ে দৈনিক প্রায় ১০০০ থেকে ২৫০০ পেইজ প্রিন্ট করা যায়। তবে, কালার এবং টোনার কার্টিজ ভেদে ফটোকপি মেশিন এবং মাল্টিফাংশন প্রিন্টারের প্রিন্ট ক্যাপাসিটি কম বেশি হয়ে থাকে।

 

৩। প্রিন্টিং খরচ

ফটোকপিয়ার দিয়ে ডকুমেন্ট কপি করার খরচ মাল্টিফাংশন প্রিন্টারের তুলনায় কম হয়ে থাকে। তবে, ফটোকপিয়ার মেশিন প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেশি হয়। ফটোকপিয়ার মেশিনে প্রতি পেইজ কপি করতে ৫০-৬০ পয়সা খরচ হয়, তবে কালার কপির ক্ষেত্রে খরচ ৯০ থেকে ১ টাকা ২০ পয়সার মত খরচ হয়। অন্যদিকে মাল্টিফাংশন প্রিন্টারে প্রতি পেইজ প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে ৭৫ পয়সা থেকে ১ টাকা ৫০ পয়সার মত খরচ হয়ে থাকে। তবে, ডুপ্লেক্স প্রিন্টিং, টোনার-সেভিং মোড এবং প্রিন্ট ম্যানেজমেন্ট সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে মাল্টিফাংশন প্রিন্টারের খরচ কিছুটা কমানো যায়।

 

৪। প্রিন্ট কোয়ালিটি

ফটোকপিয়ারে কপি করার ক্ষেত্রে চমৎকার, স্বচ্ছ, এবং ভালো রঙ প্রদান করে, যা মূল ডকুমেন্টের সাথে অনেকটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে থাকে। তাছাড়া, ফটোকপিয়ারে মূলত কালো রঙ বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। অন্যদিকে মাল্টিফাংশন প্রিন্টার এ ডকুমেন্ট, ইমেজ প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে গুণমান সম্পন্ন প্রিন্টিং সুবিধা প্রদান করে।

 

৫। মেশিন সাইজ

মাল্টিফাংশন প্রিন্টার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে মেশিনের সাইজ অনেক ছোট আকারে পাওয়া যায়। অন্যদিকে ফটোকপিয়ার সাধারণত বড় আকারের হয়ে থাকে, যার জন্য আলাদা নিজস্ব জায়গার প্রয়োজন হয়। মাল্টিফাংশন প্রিন্টার সাধারণত ডেস্কে ফিট করার জন্য যথেষ্ট ছোট এবং হালকা হয়ে থাকে।

 

৬। মেইন্টেন্যান্স

ভালো কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করতে ফটোকপিয়ার এর ক্ষেত্রে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি মেইন্টেন্যান্স এর জন্য একজন টেকনিক্যাল কাজে পারদর্শী লোকের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে মাল্টিফাংশন প্রিন্টারেরও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়, তবে এই ধরণের প্রিন্টার ইউজার ফ্র্যান্ডলি ইন্টারফেস থাকায় প্রস্তুতকারকের ম্যানুয়াল গাইডের সহায়তা নিয়ে নিজেই রক্ষণাবেক্ষণের করা যায়। এছাড়াও, নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটির মাধ্যমে দূরবর্তীভাবে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা যায়।

 

৭। স্ক্যাবিলিটি

ফটোকপিয়ার মেশিন সাধারণত বিভিন্ন মডেল, সাইজ এবং কনফিগারেশনে পাওয়া যায়। আমাদের দেশের বাজারে ব্যবসা ক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ফটোকপিয়ার দাম যথেষ্ট সাশ্রয়ী, যা দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী ডকুমেন্টস প্রিন্ট বা কপি করা যায়। অন্যদিকে মাল্টিফাংশন প্রিন্টারও বিভিন্ন মডেল ও কনফিগারেশন বিস্তৃত পরিসরে পাওয়া যায়। সাধারণত বাসা-বাড়িতে, কিংবা ছোট পরিসরে অফিসে ব্যবহার উপযোগী ছোট ডেস্কটপ মাল্টিফাংশন প্রিন্টার পাওয়া যায়। পাশাপাশি আমাদের দেশের বাজারে বড় প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার উপযোগী এন্টারপ্রাইজ মাল্টিফাংশন প্রিন্টারও পাওয়া যায়।

 

৮। নেটওয়ার্ক ইন্ট্রিগেশন

ফটোকপিয়ার এ সীমিত পরিসরে নেটওয়ার্ক ইন্ট্রিগেশন সক্ষমতা রয়েছে। ফলে, নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটির মাধ্যমে এই ধরণের মেশিন দিয়ে প্রিন্ট বা স্ক্যান করার ক্ষেত্রে আলাদা হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে, মাল্টিফাংশন প্রিন্টার সাধারণত উন্নত নেটওয়ার্ক ইন্ট্রিগেশনের সমন্বয়ে তৈরি। ফলে, বাসা, অফিস কিংবা ব্যবসা ক্ষেত্রে সহজেই নিজস্ব নেটওয়ার্ক সিস্টেমে সংযোগ করে ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও, মাল্টিফাংশন প্রিন্টারে ডকুমেন্টস সমূহ নিরাপদ রাখতে ইউজার অথেটিকেশন, ডাটা এনক্রিপশন এর মতো উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।

 

৯। অন্যান্য ফিচারস

ফটোকপিয়ার সাধারণত ডকুমেন্ট কপি, প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে কার্যকারভাবে বেশি ফোকাস করে। এছাড়াও, ফটোকপিয়ার এ অটোমেটিক ডকুমেন্ট ফিডার, সর্টিং অপশন, এবং উন্নত ডকুমেন্ট হ্যান্ডেলিং সুবিধা পাওয়া যায়। অন্যদিকে মাল্টিফাংশন প্রিন্টার দিয়ে কপি করার পাশাপাশি স্ক্যান, ফ্যাক্স এবং প্রিন্ট করা যায়। ফলে, অফিস, ব্যবসা ক্ষেত্রে একক ডিভাইস হিসেবে কার্যকর সুবিধা প্রদান করে। তাছাড়া, মাল্টিফাংশন প্রিন্টারে ওয়্যারলেস প্রিন্টিং, ইন্টেলিজেন্স ইমেজ প্রসেসিং এবং মোবাইল ডিভাইস এর সাথে সামঞ্জস্য ভাবে কাজ করার মতো উন্নত সুবিধা পাওয়া যায়।

 

১০। মেশিনের দাম

ফটোকপিয়ার এবং মাল্টিফাংশন প্রিন্টারের দাম সাধারণত মেশিনের সাইজ, ফাংশন, ফিচার এবং টোনার কার্টিজ এর উপর নির্ভর করে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। তবে, বড় সাইজের কালার ফটোকপিয়ারের দাম তুলনামূলক ভাবে বেশি। অন্যদিকে, মাল্টিফাংশন প্রিন্টারের দামও তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়ে থাকে। তবে, অফিস কিংবা ব্যবসা ক্ষেত্রে কপি, প্রিন্ট করার পাশাপাশি ফ্যাক্স, স্ক্যান করার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে মাল্টিফাংশন প্রিন্টার নেওয়াই উত্তম।

 

উপরোক্ত বিষয়সমূহ পর্যালোচনা করে আপনার পছন্দ এবং চাহিদা অনুযায়ী ফটোকপিয়ার কিংবা মাল্টিফাংশন প্রিন্টার সংগ্রহ করতে পারেন। পাশাপাশি আমাদের দেশে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস বিডিস্টল.কম থেকে চাহিদা ও বাজেট অনুযায়ী যেকোনো ফটোকপিয়ার ও মাল্টিফাংশন প্রিন্টারের দাম যাচাই করে সংগ্রহ করতে পারেন।

এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: November 27, 2023
Reviews (0) Write a Review